মস্কো নীতিগতভাবে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সমর্থন করেছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ক্রেমলিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির আগে কিছু বিষয় স্পষ্ট করার কথা বলেছেন পুতিন এবং সঙ্গে কিছু শর্তও আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তা নাহলে দ্রুত সংঘাতের অবসান অনিশ্চিত হতে পারে।
পুতিন বলেন, “আমরা যুদ্ধ অবসান প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। এটি যথাযথ এবং আমরা অবশ্যই এটিকে সমর্থন করি।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু আমরা বাস্তবতা ভেবে এগোচ্ছি। যুদ্ধবিরতি এমনভাবে হতে হবে যাতে এটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে নিয়ে যায় এবং এই সংকটের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে পারে।”
পুতিন তার বক্তব্যে আরও কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন যেগুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুতিন বলেন, “তিনি একজন শান্তিকামী হিসেবে স্মরণীয় হতে চান। যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার সহায়তা প্রয়োজন। এখন মস্কো এবং ওয়াশিংটন উভয়ই এই সংঘর্ষকে একটি মরণঘাতী প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে দেখছে, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারত।”
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি পুতিনের শর্তযুক্ত সমর্থন ওয়াশিংটনের প্রতি সদিচ্ছার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনার দরজা খুলে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে পুতিন বলেছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো পরিষ্কার করা দরকার এবং যেকোনো চুক্তিতে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করতে হবে।
রাশিয়া তার ২০২২ সালের আগ্রাসনকে বিশেষ সামরিক অভিযান বলে উল্লেখ করেছে। বলা হয়, ইউক্রেনকে নাৎসিবাদমুক্ত করতে ও ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঠেকাতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
এদিকে, পুতিনের বক্তব্য খুব আশাবাদী বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি আশা করছেন পুতিন সঠিক কাজ করবেন।
ট্রাম্প জানান, তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন এবং এতে কিয়েভ ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই আলোচনা থেকে বোঝা যাবে মস্কো একটি চুক্তি করতে প্রস্তুত কি না।
চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “এখন আমরা দেখতে পাব যে রাশিয়া চুক্তি করবে কিনা। যদি না করে তাহলে এটি বিশ্বের জন্য একটি খুব হতাশাজনক মুহূর্ত হবে।”
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “পুতিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তিনি ট্রাম্পকে এটি জানাতে ভয় পাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এ কারণেই মস্কো যুদ্ধবিরতি উপর কিছু শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, যাতে কিছুই না হয়।”
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বেশ কয়েক হাজার মানুষ হতাহত হয়েছেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। অনেক শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ যুদ্ধের কারণে মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে।