ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে দাবি করেছে তারা। শুক্রবার (৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে হামাস এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে কি না, হামাসের সর্বশেষ বিবৃতি থেকে তা স্পষ্ট নয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তবে হামাস বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছে, ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধের নিশ্চয়তা ছাড়া সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নয় তারা।
যুদ্ধ বন্ধে চেষ্টা চলছে
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) এক বিবৃতিতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
তিনি হামাসকে দ্রুত সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। এরপর, গতকাল (শুক্রবার) রাতে হামাস এক বিবৃতি দেয়, তারা মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
হামাস আরও জানায়, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের কাঠামো নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “আলোচনা সফল হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে। তবে কতজন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কী পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করবে, তা ঠিক করতে আলোচনা দরকার।”
তিনি বলেন, “হামাস জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেছে।”
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে একই সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনাও শুরু হবে। এ জন্য যুদ্ধবিরতির সময়সীমার ‘‘বেশি সময়’’ প্রয়োজন হলেও ট্রাম্প তা বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগের আলোচনাগুলো যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মতবিরোধে ভেস্তে গেয়েছিল। নেতানিয়াহু যুদ্ধের প্রথম থেকেই বলে আসছে, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করে যুদ্ধ থামানো হবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘‘গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হামাস ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে, এটি খুবই ভালো বিষয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
১৮ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও ইসরায়েলি আগ্রাসন থামেনি। দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যমতে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত ও যুদ্ধপীড়িত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর বরাতে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, শুক্রবার সারাদিনে ত্রাণ নিতে গিয়ে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৬১৩ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ নিহত হয়েছেন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে।
বিতর্কিত এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সাবেক এক নিরাপত্তা কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘আমি দেখিছে যে আমার সহকর্মীরা একাধিকবার নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এমনকি মেশিনগানের ব্যবহারও করতে দেখেছি। অথচ, তারা কোনো ধরনের হুমকি ছিলেন না।’’
তিনি জানান, একবার একটি নিরাপত্তা টাওয়ার থেকে একজন নিরাপত্তাকর্মী কয়েকজন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়। যার কারণ তারা কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় ধীরগতিতে হাঁটছিলেন!