সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে দেওয়া তার বক্তব্য আন্দোলনকে আরও উসকে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বক্তব্যকে “মিথ্যাচার” বলে আখ্যা দিয়েছে তারা।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ ও শাহরিয়ার আবেদীন বিবৃতি দিয়ে উপাচার্যের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতি আবারও দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, “ঠিক একমাস আগে এই দিনে (১৬ জানুয়ারি) ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর উপাচার্যের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালায়। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, শটগান, সাউন্ড গ্রেনেড সহযোগে এ হামলায় মারাত্মক আহত হয় অন্তত অর্ধশত। শটগানের ধাতব শার্পনেল, সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন আমাদের বহু সহযোদ্ধা। ১৬ই জানুয়ারির ওই নারকীয় ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে শাবির ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ভয়াল ১৬ জানুয়ারির একমাস পূর্তিতে আমরা শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা বলতে চাই, আমরা কিছুই ভুলিনি। আমাদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে শিগগিরই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে- শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণায় আমরা আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু আমাদের শরীরে লাঠি, বুলেট, বোমার সকল আঘাত, জখম, ঝরা রক্ত আমাদের মনে অক্ষয় শক্তির যোগান দিয়ে অঙ্গার হয়ে জ্বলছে। সংশ্লিষ্টদের পতন না হলে এই অঙ্গার অপ্রতিরোধ্য দাবানলে পরিণত হবে।”
তারা বলেন, “শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবির ব্যাপারেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন সুস্পষ্ট আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছেন। উপাচার্য যদি ভেবে থাকেন, তিনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারবেন, তবে বিরাট ভুল করছেন। সমস্ত বাধা-বিপত্তি, ভয় উপেক্ষা করে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা প্রায় একমাসব্যাপী অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে অভূতপূর্ব আন্দোলন চালিয়েছে- তার যৌক্তিকতা, ন্যায্যতা ও নৈতিক ভিত্তি কিছু দালাল ও চাটুকার ব্যতীত সারা দেশে সর্বজনস্বীকৃত। উপাচার্য তার মিথ্যাচারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন।”
পুলিশি হামলার একমাস পূর্তিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা মহামান্য আচার্যকে অবিলম্বে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে।
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহারের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা শেষে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “অন্যায় আবদার করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাথা নত করবে না। একজনও যদি ন্যায্য কথা বলে তাহলে আমরা গুরুত্ব দিয়ে এটা সমাধানের ব্যবস্থা করবো। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। আমরা ন্যায় এবং সত্যের পথে থাকবো। আপনারা দেখতে পেয়েছেন সত্য এবং ন্যায় আজকে বিজয়ী হয়েছে, টিকে আছে। মিথ্যা আজকে পরাভূত হয়েছে। দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে এমন একটি আলোকোজ্জ্বল দিন এসেছে, এতে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থী ভুল করতে পারে কিন্তু শিক্ষকরা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তোমরা আমাদের সন্তান, অভিভাবক হিসেবে আমরা কাজ করে যাবো। শিক্ষার্থীদের ভয় পাওয়ার কিছু নাই, শিক্ষকরা অভিভাবকের জায়গা থেকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। সীমানা প্রাচীর করেছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি। এই বছরের মধ্যে ৫০০ শিক্ষার্থীর হলে আবাসিকভাবে ব্যবস্থা হবে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে শতভাগ ছাত্রী হলে থাকতে পারবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শতভাগ ডিজিটাল ক্যাম্পাস করা হবে।”