যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার আশা প্রকাশ করেছে রেল মন্ত্রণালয়।
বিদ্যমান যমুনা সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে বর্তমানে ট্রেনগুলো নদী পার হতে আধা ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্রডগেজ ট্রেনগুলোকে সেতুতে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয় না।
তবে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটি নদী পার হওয়ার সময় পাঁচ মিনিটে নামিয়ে আনবে। এই সেতুতে ট্রেনকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। ব্রিজটি ব্রডগেজ ট্রেনকেও পারাপার করতে দেবে।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুতে প্রথমবারের মতো স্লিপার ব্যবহার করা হবে না। এই সেতুতে ট্রেন চলবে স্টিলের গার্ডারে।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এই সেতুর সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে সময় সাশ্রয়। বর্তমান সেতুটি বিপজ্জনক হওয়ায় একটি ট্রেন নদী পার হতে বর্তমানে প্রায় ৩০ মিনিট সময় নেয়। আমরা যদি এই সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় 100 কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালাই, তাহলে মাত্র ৫ মিনিটে যমুনা পার হওয়া যাবে।”
তিনি বলেন, “প্রকল্পটি ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে শেষ হবে ও সেতুতে ৩৮টি নতুন ট্রেন চালু করা হবে।”
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, “চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট প্রকল্পের কাজে কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প ডব্লিউডি১ এর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম বলেন, “এখন পর্যন্ত সেতুর ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ৬টি স্প্যানের মূল কাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি ট্রেন ২ লেনের সেতুর ওপর দিয়ে ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে।”
প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, ৪.৮ কিলোমিটার ডুয়েল-গেজ ও ডাবল-ট্র্যাক রেল সেতুসহ বিদ্যমান রেলওয়ের সমান্তরালে মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, উভয় পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং একটি ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
এই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত, প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ছিল ৪৬% এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৬.৭৪%।
মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৯,৭৩৪.০৭ কোটি টাকা, যা প্রথম সংশোধনের পর বেড়ে দাঁড়ায় ১৬,৭৮০.৯৬ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১২,১৪৯.২ কোটি টাকা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মূল প্রকল্প ও ২০২০ সালের ৩ মার্চ প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করে।
প্রকল্পের মূল নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এর সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫ এ স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার পরে ১২ মাসের একটি ত্রুটি দায়বদ্ধতার সময়কাল রয়েছে।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।