চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কৃষিমন্ত্রীর পুরো বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করেনি বলে দাবি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার কামরুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত রবিবার নিজ বাসভবনে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে এবং গণমাধ্যমে নানা ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় তিনি গতকাল তার অফিসে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তিনি তার স্বভাবসুলভ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় নিজ বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা এতটাই স্পষ্ট যে সেই বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো অবকাশ নেই।”
এতে আরও বলা হয়, “তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ এ দেশের প্রাচীনতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং ঐতিহ্যগতভাবে গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সব সময় চেয়েছে বিএনপি নির্বাচনে আসুক, স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করুক। সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে বিভিন্ন সময় বিএনপিকে শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপি সে সুযোগ গ্রহণ না করে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের বদলে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, পুলিশ হত্যা, হাসপাতাল ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছে। আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে লাশ বানানোর মতো বর্বরোচিত নাশকতার মাধ্যমে জনমনে চরম ভীতি সঞ্চার ও নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ও সংবিধানকে সমুন্নত রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে এ ধরণের জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের ও সন্ত্রাসের মদতদাতাদের গ্রেপ্তার করা ছাড়া সরকারের কোনো গত্যন্তর ছিল না। সেইসঙ্গে তফসিল ঘোষণার পরও বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে বারবার আলোচনায় আসার, এমনকি নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েও বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবুও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এসব উদ্যোগের সূত্র ধরেই ড. রাজ্জাক তার বক্তব্য রেখেছেন।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “তিনি অকপটে খোলাসা করে বলেছেন যে, নির্বাচন ভণ্ডুল করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। বিএনপি যদি তাদের ভুল বুঝতে পেরে নির্বাচনে আসতে রাজি হতো, তাহলে তারা হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাস ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত হতো। তখন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের জামিন পাওয়া সহজ হতো।”
এতে আরও বলা হয়, “কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কৃষিমন্ত্রীর পুরো বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করেনি। কৃষিমন্ত্রী তার বক্তব্যে কোথাও বলেননি যে, এক রাতের মধ্যে বিএনপির সব নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সে কারণেই কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের এমন খোলামেলা বক্তব্যকে কোনো কোনো মহল বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। কৃষিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং সত্য আপন জ্যোতিতেই উদ্ভাসিত থাকবে।”
সম্প্রতি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, “নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপির নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।”