বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস নিয়োগ পরীক্ষায় বৈশাখী রানী কর্মকার সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী জজ হয়েছেন। বৈশাখীর বাবা সাধন কুমার কর্মকার (৫৯) বাগেরহাট জেলা জজ কোর্টের সাঁটলিপিকার। বাবার অনুপ্রেরণায় মেধাতালিকায় তিনি অষ্টম স্থান অধিকার করেন।
বৈশাখী জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবা তাকে জজদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখিয়েছেন। তিনি লক্ষ্য স্থির করেন, একদিন তিনি জজ হবেন। তারা জেলা শহরের বাসাবাটি কেবি ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
বৈশাখী বলেন, “আমার বাবার একটা কথা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করত। একদিন বাবা আমাকে বলেছিলেন, ‘মা, তোমার থেকে কিছু চাই না, যেদিন আমাকে সবাই বলবেন, আপনি তো জজের বাবা, সেদিন হবে আমার জীবনের সেরা গিফট’। যখনই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তাম, বাবার বলা এই কথাটা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেত। তাই পিছু হটার চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি।”
তিনি আরো বলেন, “বাবা আমাকে সবসময় সাহস দিয়েছেন। আমার পরিবার ভীষণ রকম সাপোর্টিভ। যে কোনো ঝড় ঝাপটার আঁচ কখনো আমার গায়ে লাগতে দেয়নি। বাবা ভালো গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন। যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতাম, বাবা ফোন করে গান বা কবিতা শোনাতেন। বাসার কোনো ঝামেলার কথা আমাকে জানানো নিষেধ ছিল। আমার প্রিলি পরীক্ষার আগের দিন আমার মা’র পা ভেঙে যায়। কিন্তু আমাকে জানানো হয়নি। মা খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছেন। এক মাস পর যখন মা সুস্থ হন, তখন জানতে পারি পা ভাঙার কথা।”
বৈশাখী তার শিক্ষা জীবনের শুরুতেই মানবিক বিভাগ বেছে নেন। যদিও সায়েন্স বা কমার্সে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৩১৪তম স্থান অর্জন করার পরেও আইন পড়ার জন্য তিনি ঢাবি ছাড়েন। পরে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ভর্তি হন। সেখানে এলএলবি ও এলএলএম পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে বৈশাখী জানান, তিনি মাস্টার্সের পর থেকেই জুডিশিয়ারি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং টানা এক বছর শুধু পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেন। সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করতেন না। তিনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে ছয় ঘণ্টা ঘুমাতেন। ভোর ৪টায় উঠে রাত ১০টায় ঘুমাতে যেতেন।
ভবিষ্যতে বিচারক হতে চান এমনদের জন্য বৈশাখী পরামর্শ দিয়ে বলেন, “নিজের মতো করে পড়াশোনা করুন, বেশি পড়ার চেয়ে ভালোভাবে পড়ুন। খাতার প্রেজেন্টেশনের দিকে নজর দিন এবং একনিষ্ঠভাবে পড়াশোনা করুন। সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে এগিয়ে যান, ব্যর্থতাকে শক্তি হিসেবে গ্রহণ করুন, সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যান।”