বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বাৎসরিক ওরশ চলাকালে মাজার ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ “তৌহিদি জনতা”। এতে মাজারের ভেতরের শামিয়ানা ও দুইটি বৈঠকখানা পুড়ে গেছে। এসময় তৌহিদি জনতার হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার (১৬ মার্চ) মধ্য রাতে মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আহতরা হলেন- সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মো. মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিমকে (২৭) আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, ইসমাইল শাহের মাজারটি স্থাপন করা হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতি বছর এই মাজারে দুইদিনব্যাপী ওরস হয়। রবিবার সন্ধ্যায় পাঁচশতাধিক ভক্তকে নিয়ে ২৮তম ওরস শুরু হয়। রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী এসে ওরস বন্ধ করতে বলেন। মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রতিবাদ জানালে তাদের মধ্য বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা মাজারে হামলা চালিয়ে আগুন দেন।
ইসমাইল শাহ মাজারের খাদেম অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, “মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঠি-সোঠা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভেতরের গিলাব এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা ভক্তবৃন্দকে মারধর করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।”
মুফতি ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, “এ মাজারটি ভণ্ডের আস্তানা। এখানে ওরশের নামে গানবাজনা ও গাজা মাদক সেবন ও নারীর আসর বসে। আর মাজারটির নারী ভক্তরা পীরের কবরে ও প্রধান খাদেম অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের পায়ে সেজদা দেয়। ওরসে নারী-পুরুষদের গান বাজনাও চলে প্রকাশ্যে। যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী।”
তিনি বলেন, “আমার মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে এই রমজান মাসে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি তা না শুনে তার নির্দেশে তার ভক্তবৃন্দেরা আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এই ভণ্ড মাজারের খাদেম বাবুল ও তার দোসরদের শাস্তি দাবি করছি।”
আমতলী ফায়ার স্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, “দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ২ টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুনে মাজারের ভেতরের শামিয়ানা ও দুই ঘর পুড়ে গেছে।”
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”