রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে “ঊষার আলো ফাউন্ডেশন” নামের একটি এনজিও মাত্র দুই দিনে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ উঠেছে, একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে এনজিওটির নামে ওই কার্যালয় খুলে সহজ শর্তে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে ঋণ প্রদানের প্রচারণা চালাচ্ছিল।
বাড়ির মালিক নাজমুলের স্ত্রী প্রান্তি সুলাতানা বলেন,“তিন ব্যক্তি মাসিক ৭ হাজার টাকায় ৩ বছরের জন্য আমাদের বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন। চুক্তিপত্র করতে চাইলেও সময় চেয়ে তারা কালক্ষেপণ করছিলেন। পরে ১৭ মার্চ সকালে জানতে পারি তারা পালিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে আমার সঙ্গে পরিচয় হয় ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের শাখা ব্যবস্থাপক রুবেল হাসানের। এ সময় রুবেলের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের কথা জানালে সঞ্চয় বাবদ ১ লাখ টাকা জমা দিতে বলে আমাকে। ১৬ মার্চ বিকালে রুবেলের হাতে ১ লাখ টাকা জমা দেই।”
তিনি আরও বলেন, “কয়েকজন নারী কর্মকর্তা অফিস পরিদর্শনে আসবেন বলে ৪৯ হাজার টাকা মূল্যের ১২টি থ্রিপিস বাকিতে কেনেন। পরে ১৬ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকে মনটা আনচান করছিল। তাই রাতে ফোন করলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন। পরের দিন ১৭ মার্চ ৫ লাখ টাকা ঋণসহ থ্রিপিসের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল ৯টার দিকে সংস্থাটির অফিসে গিয়ে দেখি স্থানীয় এক তরুণ ছাড়া অফিসে আর কেউ নেই। এ সময় রুবেলসহ অন্যান্যদের ফোন নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিন অনেককে ঋণ দেওয়ার কথা, তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে অফিসে সবাই ভিড় করতে থাকেন।”
গোয়ালন্দের চাল ব্যবসায়ী ও পৌরসভার সদ্যবিদায়ী ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুজন মোল্লা বলেন, “২ লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় দিয়েছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “গত সপ্তাহে ৪-৫ জন লোক বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে ঋণ প্রদানের জন্য গ্রাহক তৈরি করেন। প্রলোভনে পড়ে আমিও ১৬ মার্চ ২০ হাজার টাকা দেই। ১৭ মার্চ ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা থাকায় সকাল ১০টার দিকে গিয়ে দেখি অফিস তালাবদ্ধ।’
তিনি বলেন, “১৩ ও ১৬ মার্চ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় তারা। ১৮ মার্চ গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।”
একইভাবে গোয়ালন্দ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমির হোসেন ৩ লাখ টাকা ঋণের আশায় ৩০ হাজার, আলম শেখ ২০ হাজার, আমজাদ হোসেন ৫০ হাজার, সাইকেলের দোকানি সাইদুল ইসলাম ৭০ হাজার টাকাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তাভোগীরা।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, “প্রতারকদের মোবাইল নম্বর সঠিক নয়, ঠিকানাও পাচ্ছি না। প্রযুক্তিগত চেষ্টায় তাদের ধরার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরিই তাদের শনাক্ত করতে পারব।”