বাংলাদেশি কিছু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ও কিছু খাদ্যপণ্য। ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিষ্ঠানগুলোর আশঙ্কা, এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেবে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “এখন বাংলাদেশের পোশাক ভারতে পৌঁছাতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। এতে খরচও বাড়বে। অর্থাৎ, (ভারতে পোশাক) রপ্তানি কিছুটা কমে যাবে।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য যখন নানা সমস্যায় জর্জরিত, তখন এমন পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষের ক্ষতির পরিমাণ বাড়াবে।”
বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ৫০ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে বলে জানান বিজিএমইএর সাবেক এই পরিচালক। বলেন, “ভারত বাংলাদেশের বড় ক্রেতা দেশ এবং সেখানে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বাজার বড় হচ্ছিল। এখন এই সিদ্ধান্ত নতুন করে আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল।”
ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে ভুটান বা নেপালের ট্রানজিট পণ্য প্রভাবিত না হলেও সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ওপর এটি একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুধু তৈরি পোশাক নয়; ফলমূল, কার্বনেটেড বেভারেজ, প্লাস্টিক ও পিভিসি পণ্য, কাঠের আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু পণ্যের ওপরও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবন্দরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সার্বিকভাবে ব্যবসা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকছেই।
শনিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট বন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতীয় তুলা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং স্থলবন্দরগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর ভারত এই সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে ভারত সরকারের ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এ বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
ডিজিএফটির বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কোনো স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে না। তবে ভারতের ব্যবসায়ীরা কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নবসেবা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অবিলম্বে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
পাশাপাশি ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস)/ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল এবং ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না।
তবে মাছ, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল ও ভাঙা পাথর নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখেনি ভারত।