আজকালকার পরিস্থিতি অনুযায়ী, বেশিরভাগ মানুষ ১ ঘন্টার জন্যও তাদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন না বা রাখতে পারেন না। কাজের জন্য ফোন ব্যবহার করাটা বোধগম্য হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লোকেরা কোনো কারণ ছাড়াই সারাদিন বসে ফোন স্ক্রল করতে থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, সারাদিন ফোনে ব্যস্ত থাকার এই অভ্যাস মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। মস্তিষ্কের ওপর এই অভ্যাসের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তারা বলেন, যা সত্যিই খুবই গুরুতর এবং সকলেরই এগুলো সম্পর্কে জানা উচিত।
কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে মনোনিবেশে সমস্যা
যখন আপনি সারাদিন বসে ফোনে আপনার পছন্দের জিনিসগুলো দেখেন, তখন মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই কারণে মস্তিষ্ক তাৎক্ষণিক তৃপ্তিতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং আপনার মস্তিষ্ক এমন কিছু করতে চায় যা তাকে তাৎক্ষণিক সুখ দেবে। যা ঘটে তা হলো বই পড়া বা সমস্যা সমাধানের মতো বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এগুলো করলে তাৎক্ষণিক সুখ পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে, আপনি কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে কম মনোযোগ দিতে সক্ষম হন এবং ফোন ব্যবহারের ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।
উদ্বেগ এবং একাকীত্বের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়
যখন আপনি সারাদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করতে থাকেন, তখন আপনি প্রায়ই আপনার জীবনকে অন্যদের নিখুঁত জীবনের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। যদিও এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই তাদের জীবনের সেরা দিকগুলোই দেখাচ্ছে। এই কারণে, মানুষের মধ্যে উদ্বেগ এবং একাকীত্বের অনুভূতি খুবই সাধারণ হয়ে ওঠছে। চিকিৎসকদের মতে, ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার অক্সিটোসিন নামক হরমোনের ঘাটতিও তৈরি করে। এটি একই হরমোন যা মানুষের সঙ্গে বন্ধনের অনুভূতি তৈরি করে। এর অনুপস্থিতিতে, একজন ব্যক্তি একাকীত্ব এবং চাপ অনুভব করতে শুরু করে।
মানসিক ক্লান্তি ভর করে
অনেক শারীরিক পরিশ্রম করার পর যেমন আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তেমনি আমাদের মনও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একে বলা হয় মানসিক ক্লান্তি এবং যখন এটি ঘটে, তখন আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার কোনো কাজ করার ইচ্ছা হবে না, এক অদ্ভুত অনুভূতি হবে এবং আপনার মনে নোংরা চিন্তাভাবনা আসবে। চিকিৎসকদের মতে, যখন আপনি সারাদিন ফোনে বসে থাকেন এবং কিছু না কিছু দেখতে থাকেন, তখন অতিরিক্ত ডোপামিনের কারণে আপনার মস্তিষ্ক ক্লান্ত বোধ করে। এমন পরিস্থিতিতে, আপনার মস্তিষ্ককে পুনরায় চালু করতে, ফোনটি পাশে রাখুন এবং কিছু ব্যায়াম করুন অথবা আপনার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন। আপনি যত বেশি সময় অফলাইনে কাটাবেন, তত বেশি আপনি বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ দিতে এবং চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস