আর্থ-সামজিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে আফ্রিকার অনেক দেশ। এসব দেশে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। দেশগুলোতে এখনো অনেকে চিকিৎসার জন্য কবিরাজের স্মরণাপন্ন হন।
আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে চিকিৎসার নামে “আধ্যাত্মিক কবিরাজরা” নারীদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও শোষণ করছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি বলছে, কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বেশিরভাগ সেবাগ্রহীতা নারী। তারা জ্বিন তাড়ানোর জন্য ঝাড়-ফুঁক নিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন। এই নারীদের বিশ্বাস ছিল ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে জ্বিনের অশুভ প্রভাব দূর করে নানা সমস্যার সমাধান ও রোগের হাত থেকে রেহাই পাবেন তারা। মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের “আধ্যাত্মিক চিকিৎসা” বেশ জনপ্রিয়। তবে এই চিকিৎসার অন্তরালে নারীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
আফ্রিকার দুটি দেশ মরক্কো ও সুদানে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৫ জন নারীর জবানবন্দী সংগ্রহ করেছে বিবিসি। তাদের মধ্যে ৬৫ জন জানিয়েছেন, তারা কবিরাজের লালসার শিকার। কবিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি থেকে ধর্ষণ পর্যন্ত নানা অভিযোগ এনেছেন তারা।
পরে অভিযোগের বিষয়ে কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, আদালত, আইনজীবী ও অন্য নারীদের সঙ্গে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যমটি। তারা এগুলোর সত্যতা পেয়েছে।
এছাড়া বিবিসির প্রতিবেদক তদন্তের স্বার্থে রোগী সেজে এ রকম কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। বিবিসির সংবাদিক জানিয়েছেন, তার শরীরে অশোভনভাবে হাত দেওয়া হলে তিনি ওই স্থান ছেড়ে পালিয়ে যান।
এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হতো বদ জ্বিনের ভয় দেখিয়ে। বলা হতো, এই তথ্য ফাঁস করে দিলে বদ জ্বিন লেলিয়ে দিয়ে ক্ষতিসাধন করবেন। এর ফলে পুলিশ ও আদালত তো দূরের কথা অনেকে তার পরিবারের সদস্যদেরও জানাননি।
সুদানে বিবিসি ৫০ জন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে তিনজনই বিশেষ একজন আধ্যাত্মিক নেতার কথা বলেছেনন। তার নাম শেখ ইব্রাহিম।
একজন নারী বলেছেন, “তাকে শেখ ইব্রাহিম যৌন মিলন করতে বাধ্য করেছেন।”
আলাফ নামে আরেক নারী বলেছেন, “শেখ ইব্রাহিম তার সঙ্গে যৌন মিলন করতে চাইলে তিনি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।”
তিনি বলেন, “তার নিজেকে ক্ষমতাহীন মনে হয়েছিল। শেখরা যে এসব বলে বা করে এটা অনেক লোক বিশ্বাস করে না। আমি সাক্ষী কোথায় পাবো? ওই ঘরে আমি তার সামনে ছিলাম তা তো আর কেউ দেখেনি।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে ছদ্মবেশে এক সাংবাদিক শেখ ইব্রাহিমের সাক্ষাৎ করেন। তিনি “সন্তান হচ্ছে না এমন এক নারী” পরিচয়ে শেখ ইব্রাহিমের কাছে গিয়েছিলেন। শেখ ইব্রাহিম তাকে মাহায়া নামে এক বোতল উপশমকারী পানি তৈরি করে দিয়েছেন।
ওই সাংবাদিক বলেছেন, “আমি যখন ইব্রাহিমের ঘরে প্রবেশ করলাম তখন আমার খুব কাছ ঘেঁষে বসলেন শেখ ইব্রাহিম। আমার পেটের ওপর হাত রাখলেন। আমি হাত সরাতে বললে তিনি তার হাত কাপড়ের ওপর দিয়ে যৌনাঙ্গের ওপর রাখলেন।”
বিবিসি তাদের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ মরক্কো ও সুদান কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছিল। তবে দেশ দুটি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নারাজ।
সুদানের ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিবার ও সমাজ বিভাগের প্রধান ড. আলা আবু জেইদ বলেছেন, “দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য এটি এখন অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই।”
মরক্কোর ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক বলেন, “এসব বিষয়ে আইনগতভাবে হস্তক্ষেপ করা কঠিন। সমাধান হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা ও তার প্রচার।”