Saturday, April 19, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

নারীদের পোশাকবিধি নজরদারিতে সিসিটিভি-ড্রোন-অ্যাপ ব্যবহার করছে ইরান

আইন লঙ্ঘনে নারীদের গ্রেপ্তার, মারধর, এমনকি পুলিশি হেফাজতে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম

নারীরা সরকার নির্ধারিত পোশাকনীতি মেনে চলছে কি-না, তা নজরদারি করতে ইরান বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এক্ষেত্রে সিসিটিভি, ড্রোন এবং  মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে লোকজনকে ট্যাক্সি ও অ্যাম্বুলেন্সের মতো ব্যক্তিগত যানবাহনেও নারীরা পোশাকবিধি লঙ্ঘন করছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য দিতে উৎসাহিত করছেন।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজধানী তেহরান ও ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে নারীরা হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করছেন কি-না, তা নজরদারি করতে ড্রোন ও নিরাপত্তা ক্যামেরার ব্যবহার বাড়ছে।

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের তৈরি করা ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীরা যদি আইন লঙ্ঘন করেন অথবা ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তবে তাদের গ্রেপ্তার, মারধর, এমনকি পুলিশি হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার মতো পরিণতি ভোগ করতে হয়।

ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি কর্তৃপক্ষের সহিংসতার কারণেই ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২২ বছর বয়সী ওই কুর্দি তরুণীকে দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারধর করা হয়েছিল। তবে কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তাঁর মৃত্যুর কারণ “হৃদ্‌রোগজনিত” বলে দাবি করে।

মাহসার মৃত্যুর পর দেশজুড়ে যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, তা আন্দোলন আকারে ছড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর দমন-পীড়নের হুমকি থাকার পরও এই আন্দোলন এখনো অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভের দুই বছর পরও ইরানের নারী ও কিশোরীরা আইনি ও বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, ইরান সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।

“সতর্কতা” কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টিকে একটি একটি নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

তেহরানের আমির-কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে নারীদের হিজাব পরিধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ইনস্টল করেছে। এছাড়াও ইরানের প্রধান সড়কগুলোর নিরাপত্তা ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে হিজাববিহীন নারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তারা “নাজার” নামের একটি মোবাইল অ্যাপ পেয়েছেন। ইরানের পুলিশ এই অ্যাপ পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে অনুমোদিত ব্যক্তিরা হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারেন। এই অ্যাপ ব্যবহার করে লোকজন যানবাহনের ভেতরে হিজাববিহীন নারীদের অবস্থান, তারিখ, সময় এবং যানবাহনের নম্বর প্লেটসহ রিপোর্ট করতে পারেন। এই রিপোর্ট পুলিশকে সরাসরি সতর্কবার্তা পাঠায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পর যানবাহনের মালিককে একটি মেসেজ পাঠিয়ে হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগটি জানায় পুলিশ। যদি কেউ এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করেন, তবে তাঁর যানবাহন আটক করা হতে পারে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা প্রায় ৩০০ জন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইরানের বিচারিক ব্যবস্থার গভীর পর্যালোচনা করেছেন। নির্যাতিতদের পরিবারকে পরিকল্পিতভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তদন্তে আরও দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক তিন শিশু এবং তিন প্রাপ্তবয়স্ক বিক্ষোভকারীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মৃত্যুকে পরে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আটক নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এক নারী বন্দীর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাকে গুরুতর মারধর, ধর্ষণ এবং পরবর্তীতে গণধর্ষণেরও শিকার হতে হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনটি ১৮ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।

   

About

Popular Links

x