গত শতাব্দীতে বিশ্বে সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি ছিল খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি। ১৯০০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল আগের শতাব্দীর তুলনায় চার গুণেরও কম। অর্থাৎ আমাদের প্রপিতামহ বা পিতামহ প্রজন্মের তুলনায় বর্তমান সময়ে ৫০% এর বেশি খাদ্য রয়েছে।
এই সময়ে কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে বেশি করে চাষ করায় খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছেন। আধুনিক যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন সবুজ বিপ্লবকে দারুণভাবে ত্বরান্বিত করেছে।
শান্তিতে নোবলে পুরস্কার বিজয়ী কৃষিবিদ নরম্যান বোরলাগ আধুনিক কৃষি পদ্ধতির বিস্তারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার এই উদ্যোগে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষুধার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
খাদ্য নিশ্চয়তার পাশাপাশি সবুজ বিপ্লব সামাজিক নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। কৃষিখাত সমৃদ্ধ হলে মানুষের পরিশ্রম কমে, ফলে তারা আরও বিস্তৃত পরিসরে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত হতে পারে।
সবুজ বিপ্লব এক অসাধারণ অর্জন ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সুবিধা প্রসারণ এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা নিরসনে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব প্রয়োজন।
বিষয়টা এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ বিশ্বের সব মানুষের খাদ্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। ২০১৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশের জন্য বিশাল উন্নয়নে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) হিসেবে পরিচিত।

এসডিজি'র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো কৃষি উন্নয়ন, যার মাধ্যমে ক্ষুধা নিরসন ও পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।
তবে দুর্ভাগ্যবশত, আমরা সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছি। এর পেছনে শুধুমাত্র কোভিড মহামারি দায়ী নয়। কোভিড মহামারির আগের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে একটি সূচকে দেখা গেছে, রাজনীতিবিদদের দেওয়া এই খাদ্য নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি ২০৩০ সালে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না, এটি আরও ৮০ বছরেরও বেশি সময় পরে ২১০০ সালের প্রথম দশকে সম্ভব হতে পারে।
বাস্তবতা হলো, এসডিজির প্রধান লক্ষ্য অর্জনে পুরো বিশ্বকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।এখন ২০২৩ সাল, অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অর্ধেক সময় আমরা পার করে ফেলেছি, কিন্তু অর্জনের অর্ধেকের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারিনি। এই কারণে আমাদের কোপেনহেগেন কনসেনসাসের বিশেষজ্ঞরা বাকি সময়ের জন্য সবচেয়ে কার্যকর নীতি চিহ্নিত করতে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কাজ করেছেন। আমরা যদি সবকিছু করতে না পারি, তাহলে আমাদের উচিত কৃষি এবং ক্ষুধাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেওয়া।
আমাদের গবেষকরা বেশ কিছু কৃষি সহায়ক নীতি চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে- সার ভর্তুকি এবং সেচ বাড়ানো। এগুলো সবই সামাজিক সুবিধা বাড়ায়, তবে এই খাতে বিনিয়োগের প্রভাব দৃশ্যমান নয়।
যাই হোক, কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগে বাড়ানোর একটি ভালো সুযোগ বর্তমান বিশ্বের সামনে রয়েছে।
ড. বিওন লম্বোগ কোপেনহেগেন কনসেনসাসের প্রেসিডেন্ট এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির হুভার ইনস্টিটিউশনের ভিজিটিং ফেলো।
এই নিবন্ধ ঢাকা ট্রিবিউনের জন্য জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. বিওন লম্বোগের লেখা বিশেষ সিরিজের দ্বিতীয় অংশ। সিরিজের প্রথম অংশ পড়ুন এখানে ক্লিক করে।