Friday, April 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

শহিদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইসলামি প্রতিরোধের দৃঢ়তা ও শক্তির বার্তাবাহক

সচেতন অমুসলিমরাও তাকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম

২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইসলামি জাতির জীবনে ঐতিহাসিক ও চিরভাস্বর একটি দিন। এদিন লেবাননের কৃতজ্ঞ মানুষের পাশাপাশি অন্য ইসলামি দেশগুলোর প্রতিনিধিসহ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মহান মুজাহিদ, ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টের নেতা শহিদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং তার বন্ধু ও সহচর, শহিদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এই মহান ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে বিশ্ব, বিশেষ করে ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টের শত্রুদের জন্য স্পষ্ট ও অর্থবহ বার্তা রয়েছে এবং লেবানন ও ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ সম্পর্কে তাদের হিসাব আবারও ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

এই মহান ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য তা হলো:

এক: ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টের মহান ও গর্বিত নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তার শাহাদাতের সঙ্গে আরও প্রিয় ও স্থায়ী হয়ে উঠেছেন এবং তার প্রতি বিশ্ববাসীর মমতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পেয়েছে। লেবাননের ভেতরে ও বাইরের লাখো মানুষের  উপস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে যে এই মুজাহিদ ও মহান নেতা কতটা প্রিয় ও সম্মানিত এবং বিশ্বের মুসলিম জাতিগুলো, এমনকি মুক্ত ও সচেতন অমুসলিমরাও তাকে কতটা ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে।

তিনি এখন সাধারণ মানুষ ও তার ভক্তদের মাঝে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তার নাম ও স্মৃতি চিরকাল বেঁচে থাকবে এবং তিনি একটি প্রতিষ্ঠান ও একটি আলোকিত পথ হিসেবে ইসলামি উম্মাহ এবং বিশ্বের সমস্ত মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

দুই: এই বীর মুজাহিদ এবং ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টের মহান নেতার জানাজায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে তার পথ অব্যাহত রয়েছে এবং ইসলামি উম্মাহর উদ্যমী তরুণরা দখলদার ও অপরাধী ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের জিহাদ ও সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতে ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্ট  ক্ষতির শিকার হওযার পাশাপাশি একজন ক্যারিশম্যাটিক ও অনন্য নেতাকে হারালেও তার প্রশিক্ষিত ছাত্র ও অনুসারীরা জিহাদ ও সংগ্রামের ময়দানে উপস্থিত রয়েছে এবং ইসলামি প্রতিরোধ তার পথচলা অব্যাহত রাখবে।

তাই বলাই বাহুল্য যে, ইহুদিবাদীদের মিথ্যা প্রচারণা সত্ত্বেও যারা দাবি করে যে লেবাননের হিজবুল্লাহ তার নেতা হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে, কিন্তু ময়দানের বাস্তবতা এবং সংগ্রামের দৃশ্য প্রমাণ করে যে লেবানন, ফিলিস্তিন এবং পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে ইসলামি প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে এবং এখনও শিশু-হত্যাকারী ইহুদিবাদী শাসকদের দখলদারিত্ব এবং অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

নাসরুল্লাহ ও সাফিউদ্দিনের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল/সৌজন্য

তিন: এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্ট টিকে থাকার  পাশাপাশি পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের দ্বিমুখী সংঘাতের মধ্যেও হকের পক্ষে রয়েছে এবং মিথ্যা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে বিশ্বে সত্যের পতাকাবাহী হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ইহুদিবাদী এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকরা তাদের মিডিয়া শক্তি দিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং হামাসের বিরুদ্ধে বিশ্বে জনমত গড়ে তোলার যতই চেষ্টা করুক না কেন, তারা এই কাজে সফল হয়নি এবং আজ সারা বিশ্ব বিশ্বাস করে যে পশ্চিম এশিয়ার দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধ ও সংঘর্ষে হিজবুল্লাহ এবং ইসলামিক প্রতিরোধ ফ্রন্ট সঠিক পথে রয়েছে। এই দাবির সুস্পষ্ট কারণ হলো, আজ শুধু সব ইসলামি দেশের শহরগুলোর রাস্তায় জনগণ লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের পতাকা ধারণ করে  ইহুদিবাদী শাসক ও তার পশ্চিমা সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মিছিল করছে তাই নয়; বরং ইউরোপ ও আমেরিকার রাজধানীসহ  বিভিন্ন শহরের রাস্তায়ও মানুষ ফিলিস্তিন ও লেবাননের সমর্থনে বিক্ষোভ ও মিছিল করছে এবং গণহত্যাকারী ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের নিন্দা জানাচ্ছে।

চার: ২৩ ফেব্রুয়ারি, রবিবার বৈরুতের রাজপথে মহান মুজাহিদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর লাখো মানুষের জানাজার আরেকটি বার্তা হলো; যতদিন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইহুদিবাদী শাসকদের দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে এবং যতদিন এই অপরাধী শাসক লেবাননের মাটিতে আগ্রাসন চালাবে, ততদিন এই দখলদার ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আর এ কারণে প্রতিরোধই হয়ে উঠেছে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের মানুষের পরিচয়। পশ্চিমা শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যদি  পশ্চিম এশিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং শান্তি চায়, তবে অবশ্যই ইহুদিবাদী শাসকদের দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে। অন্যথায়, যতদিন দখলদারিত্ব থাকবে, ততদিন ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টের সংগ্রাম বন্ধ হবে না।

পাঁচ: শেষ কথা হলো, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শহিদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর ঐতিহাসিক জানাজা অনুষ্ঠানের অপূর্ব দৃশ্যে এই প্রতিশ্রুতি ও সুসংবাদ রয়েছে যে, ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্ট ও কুদস দখলদার শাসকগোষ্ঠীর মধ্যকার সংঘাতের শেষ বিন্দু হলো ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্টের বিজয় এবং অত্যাচারী ও দখলদার ফ্রন্টের পরাজয়। যদিও মিথ্যা ফ্রন্ট উন্নত অস্ত্রের জোরে এবং ভারী বোমার ব্যবহার করে  নারী ও শিশুসহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে এবং মসজিদ, স্কুল এবং হাসপাতাল ধ্বংস  করছে, কিন্তু ঐশী প্রতিশ্রুতি এবং কুরআনের সুসংবাদ অনুযায়ী এই ফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে এবং যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের বিজয় হবে।

সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মদী, কালচারাল কাউন্সেলর, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস, ঢাকা।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। ঢাকা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী নয়।

 

   

About

Popular Links

x