অন্যান্য সব সম্পর্কের মতো দাম্পত্য সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কেউ কেউ সেটি বেশ ভালোভাবে সামাল দিতে পারেন। আর কেউ কেউ বেছে নেন বিচ্ছেদের পথ। আর বিভিন্ন গবেষণা বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দম্পতিদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়েছে।
তবে, এই বিবাহবিচ্ছেদের হার কিছু নির্দিষ্ট পেশাজীবীদের মধ্যে আবার বেশি। ২০২৪ সালে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ এমন ১০টি পেশার একটি তালিকা করেছে।
চলুন, ডিভোর্স ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবদেন অনুসারে জেনে নেওয়া যাক, কোন ১০ পেশাজীবীর মধ্যে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ ও কেন।
১. বারটেন্ডার
বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে তালিকায় সবার ওপরে আছেন বারটেন্ডাররা। তারা মূলত বারে পানীয় তৈরি ও পরিবেশন করেন।
২. এক্সোটিক ডান্সার ও অ্যাডাল্ট পারফরম্যান্স আর্টিস্ট
বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন এক্সোটিক ডান্সার ও অ্যাডাল্ট পারফরম্যান্স আর্টিস্টরা। পেশাগত কারণে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে মানসিক চাপ, অনিরাপত্তাবোধ, ঈর্ষা, প্রতারণার মতো বিষয়গুলো অতিমাত্রায় বেশি থাকে।
৩. উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা
বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা। ডিভোর্স ডটকম বলছে, এটি এমন এক পেশা, যেখানে সব সময় মানসিক চাপে থাকতে হয়। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এই পেশাজীবীদের মানসিক দূরত্ব থাকে। তাদের জীবনসঙ্গীরা একাকিত্ব ও সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এ কারণে স্বাভাবিক একটা দাম্পত্য জীবনের অভাবে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তারা।
৪. চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী
ডিভোর্স ডটকম বলছে, এসব পেশাজীবীর কাছে সব সময় প্রথম প্রাধান্য থাকে রোগী, জীবনসঙ্গী নয়। এই পেশাজীবীরা খুব কমই সঙ্গী বা পরিবারকে সময় দিতে পারেন। তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই সঙ্গীর মানসিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হন।
৫. গেমিং সার্ভিসেস ওয়ার্কার
বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে এরপরই তালিকায় রয়েছেন এই পেশার লোকেরা। যারা ক্যাসিনোতে কাজ করেন বা জুয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাদের জীবনযাপনের ধরনের কারণে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে।
৬. ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস
অনেকের কাছে খুবই আকর্ষণীয় চাকরি। এই পেশাজীবীরা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান। বেতনও তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে এই চাকরি যতই আকর্ষণীয় আর গ্ল্যামারাস লাগুক না কেন, পেশাটি কম চাপের নয়। ক্রমাগত ভ্রমণের কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন। লম্বা সময় পরিবার থেকে দূরে থাকা ও “লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ” চালিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়।
৭. কাস্টমার কেয়ার, টেলিমার্কেটের ও সুইচবোর্ড অপারেটর
এসব পেশাজীবী সব সময় চেয়ারে বসে থাকেন। পুরো সময় ফোনে কথা বলেন। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির ধমক শুনেও ঠান্ডা মাথায় মানুষের সমস্যার সমাধানও দিতে হয়। এ কারণে তারা মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। মানসিক চাপ থাকে ভীষণ। ফলে জীবন থেকে সুখ বিষয়টা দূরে চলে যায়। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সম্পর্কে।
৮. ডান্সার ও কোরিওগ্রাফার
বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে এরপরই তালিকায় রয়েছেন ডান্সার ও কোরিওগ্রাফাররা। বিশেষ করে ব্যালে ডান্সারদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ। ডিভোর্স ডটকম বলছে, পেশাজীবনে সর্বোচ্চ সফলতার দেখা পাওয়ার জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাদের ফিটনেস বজায় রাখা খুবই জরুরি। শরীরে ব্যথা, ফ্র্যাকচার, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, হাড় ভাঙা—এ রকম নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তারা। নিজেদের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতা ও অসন্তুষ্টিতে ভোগার হারও তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পেশাজীবীরাই সবচেয়ে বেশি “ইটিং ডিজঅর্ডার”–এ ভোগেন। তাদের একটা বড় অংশ অসুখী। তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে অপর ব্যক্তি যে সুখী হবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক!
৯. ম্যাসাজ থেরাপিস্ট
ডিভোর্স ডটকম বলছে, জীবনসঙ্গীরা এই পেশাজীবীদের পেশা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভোগেন। বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে প্রথম ১০টির তালিকায় এই পেশাটি রয়েছে নবম স্থানে।
১০. টেক্সটাইল নিটিং ও ওয়েভিং মেশিন অপারেটর
বিবাহবিচ্ছেদের হারের দিক থেকে প্রথম ১০টির তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছেন এই পেশার লোকেরা। কারণ হিসেবে ডিভোর্স ডটকম বলছে, তারা চাকরিজীবন নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরেন। এটা তাদের মানসিক চাপ বাড়ায়। এর প্রভাব পড়ে মেজাজ, মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্কে।