স্ত্রীকে লুকিয়ে প্রাক্তন কিংবা অন্য কারো সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন? সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে সেই বান্ধবীর ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন? অফিসের সহকর্মীর রিলস দেখে লাইক করার অভ্যাসও রয়েছে? গাদের টুকটাক ইমোজি না পাঠালে মন আনচান করে? আপনি কি জানেন, এই কাজগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করছেন?
প্রশ্ন উঠতে পারে, একটি ইমোজি তো মাত্র, সম্পর্ক তো হয়নি, তাহলে প্রতারণার কথা উঠছে কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আচরণের সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিক প্রতারণার পার্থক্য রয়েছে বটে, কিন্তু এগুলোকেও এক ধরনের প্রতারণাই।
আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ, নগণ্য, ছোট ঘটনা। কিন্তু সব কিছু ঘটছে স্বামী-স্ত্রী বা সঙ্গীর আড়ালে। অনেকেই এই আচরণগুলোকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে নাও মনে করতে পারেন। তাদের যুক্তি হলো, এর সঙ্গে যৌনতা জড়িয়ে নেই। কিন্তু জানেন কি, এর কারণেই আপনার ঘর ভাঙতে পারে?
আপনি পুরুষ হোন বা নারী হোন, ছোট্ট এই কাজটির মাধম্যে সঙ্গীর বিশ্বাস ভাঙছেন সচেতন বা অসচেতনভাবে।
এই আচরণগুলো কিন্তু নতুন নয়, কিন্তু সম্প্রতি এটি নিয়েই কথাবার্তা চলছে দেশেবিদেশে। মনোবিদেরা এগুলোকেই ছোটখাটো "প্রতারণা" হিসেবে গণ্য করছেন। পশ্চিমাবিশ্বে এটিকে বলা হয় "মাইক্রো-চিটিং"।
ফ্লোরিডার মনোবিদ লিডিয়া আন্তোনাতোস এবং ওহায়োর স্নায়ুরোগ চিকিৎসক হেইডি মোয়াওয়াড এই মাইক্রো-চিটিং নিয়ে গবেষণা করেছেন।
কোন কোন আচরণকে এই ধরনের প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে। বিশ্বাসঘাতকতার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে এক এক রকম। কিন্তু আপনি কি আপনার এই সমস্ত কাণ্ড সঙ্গীর কাছে গোপন করছেন? তাহলেই কিন্তু আপনিও বিশ্বাসঘাতক। মনোবিদেরা কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন।
ক্ষুদ্র, ছোটখাটো এই প্রতারণার কয়েকটি উদাহরণ হলো-
১. প্রাক্তন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে লুকিয়ে রোমান্টিক মেসেজ পাঠানো।
২. সামাজিকমাধ্যমে বিশেষ কারও ছবি বা ভিডিও দেখে ইমোজি দেওয়া।
৩. আপনি যে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন, সেটির ব্যাপারে সামাজিকমাধ্যমে মিথ্যা বলা, বা লুকিয়ে রাখা।
৪. সহকর্মীকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সেজেগুজে অফিস যাওয়া।
৫. নিজের যৌনজীবন সম্পর্কে বাইরের কোনও মানুষের সঙ্গে কথা বলা, নগ্ন ছবি পাঠানো অথবা যৌন উস্কানিমূলক কথাবার্তা চালানো।
৬. আপনাকে পছন্দ করেন, এমন কারও সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
৭. সঙ্গী ছাড়া অন্য কাউকে মাঝেমধ্যেই লুকিয়ে আলিঙ্গন করা।
৮. বিশেষ কাউকে লাভ কিংবা কেয়ার ইমোজি পাঠানো।
৯. নিজের সঙ্গীর সম্পর্কে অন্যের কাছে অভিযোগ করা।
শরীরী প্রতারণার সঙ্গে পার্থক্য
সাধারণত, অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে, তা মূল প্রতারণার আওতায় পড়ে। কিন্তু এই ধরনের ক্ষুদ্র প্রতারণার ক্ষেত্রে খুব সহজে এই আচরণগুলোকে শনাক্ত করা যায় না। হাতেনাতে প্রমাণ করার মতো কিছুই ঘটছে না। এক্ষেত্রে রোমান্টিক অথবা যৌন উস্কানিমূলক কথাবার্তা চালানোই আসল। সেটিই "মাইক্রো" প্রতারণার আওতায় পড়ে।
মানসিক প্রতারণার সঙ্গে পার্থক্য
আপনি যদি অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন (ধরে নেওয়া যাক, যৌনসম্পর্ক হয়নি), সেটিকে "মানসিক প্রতারণা" হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এখানেই ক্ষুদ্র প্রতারণা এগুলোর থেকে আলাদা। এখানে আলোচ্য প্রতারণায় কোনো সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না আপাতভাবে। কিন্তু কথাবার্তা, টুকটাক রোমান্টিক আলাপ-আলোচনা চলতেই থাকছে। আপনি ভাবছেন, এতে আর ক্ষতি কী? কিন্তু মানসিক প্রতারণা এবং শারীরিক প্রতারণার মতো মূল প্রতারণার আওতায় পড়ার আগের ধাপই হল এই "তুচ্ছ," কাজকর্ম। এক্ষেত্রেও প্রমাণ করার উপায় নেই।
আপনার সঙ্গী আপনার গোপনে এই ধরনের আচরণ করছেন কি-না, কীভাবে বুঝবেন?
মনোবিদেরা কয়েকটি প্রবণতার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। যেগুলির মধ্যে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করে দেখলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।
১. আপনার সঙ্গী কি নিজের ফোনের পাসওয়ার্ড গোপন রেখেছেন আপনার কাছে?
২. আপনার সঙ্গী কি নিজের ফোনটিকে উল্টো করে রাখেন সব সময়? যাতে মেসেজ বা ফোন এলে চট করে কারও চোখে না পড়ে?
৩. ফোন এলে আপনার সামনে থেকে চলে গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলেন কী তিনি?
৪. ফোন থেকে মেসেজ বা চ্যাট মুছে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে কী আপনার সঙ্গীর?
এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটলেই সচেতন হয়ে যেতে হবে।
উপায় কী?
ক্যালিফোর্নিয়ার সাউথ প্যাসাডিনার মনোবিদ মলি বুরেটস বলছেন, ‘‘সম্পর্কে অতৃপ্ত বোধ করলে, অথবা নিজের অপূর্ণ চাহিদাগুলো মেটানোর জন্যই হয়তো অসচেতন ভাবে কেউ কেউ এমন ধরনের কাজ করে থাকেন। কিন্তু সেটি এক প্রকার প্রতারণাই বটে। কোনটি উচিত, আর কোনটি অনুচিত, সে বিষয়ে আপনি এবং আপনার সঙ্গী একমত কি-না জানতে হবে। প্রেমের সম্পর্ককে কে কীভাবে দেখছেন, কার কী প্রত্যাশা, সেই সব নিয়ে আলোচনা করা উচিত দু’টি মানুষের। এমন অপ্রীতিকর ঘটনা চোখে পড়লে সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিবাদে না জড়িয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে একে অপরের সামনে তুলে ধরতে হবে। নীরব থাকলেও সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।’’