বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সরকারকে অনুরোধ করবো জাতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে না রেখে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে অনুরোধ করবো, এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে চাই। অতীতে সরকারে ছিলাম, ইনশাল্লাহ আবার জনগণের ভোটে আমরাই সরকারে যাবো।
তিনি বলেন, “সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমরা বলছি তাড়াতাড়ি ভোটটা দিন, নির্বাচনটা দিন। ভোট তাড়াতাড়ি দিলে একটা সরকার আসবে। যার পেছনে জনগণ থাকবে। যতো বড় বড় লোক দিয়েই সরকার চলুক, পেছনে জনগণ থাকতে হবে। তাই আমরা বলছি, কালবিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিন। তার জন্য যতটুকু সংস্কার করা দরকার তা করে ভোট দিন। কবে ভোট হবে, কিভাবে ভোট হবে একটু জানিয়ে দিন। এরপর দেশ কিছুটা শান্ত হবে, স্থিতিশীল হবে।”
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা চাই এ সরকার সফল হয়ে একটা নির্বাচন দিক। সরকার সংস্কারের জন্য ছয়টা কমিশন বানিয়েছে। বলেন তো সাধারণ মানুষ সংস্কার কথাটা কতটুকু বুঝেন? সরাসরি বুঝি, কয়টা ভাত, মোটা কাপড়, ছেলে মেয়ে অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা। এটাই আমাদের সংস্কার, তাই না? আমরা জানি, এখন যে অবস্থায় আছি সে অবস্থায় বাংলাদেশে কোনো শান্তি আসবে না। তাই ৩১ দফা প্রয়োজন। যাতে সকল বিষয় সংস্কারের কথা আছে।”
তিনি বলেন, “অনেকে অনেক কথা বলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনারা তা দেখেছেন। এমন কথা বলেন, যেন তারাই দেশটার জন্য সংগ্রাম করেছেন। আমরা সবাই বাংলাদেশে ঘরে বসেছিলাম। বিদেশে বসে অনেক কথা বলা যায়। দেশে আমরা যারা সংগ্রাম করলাম, রক্ত দিলাম, যাদের মায়ের কাছ থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল, সেই অবস্থায় আমরা যেন কিছুই করিনি।”
দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পালিয়ে গেছেন হাসিনা বেগম। হাসিনা বেগম গিয়ে আবার দিল্লিতে বসেছেন। দিল্লিতে বসে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা বলতে চাই, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। তাদের অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তারা যদি মনে করে থাকে আওয়ামী লীগই তাদের বন্ধু, তাহলে ভুল হবে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা পাশে পাবে না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটি ঘৃণিত রাজনৈতিক দল।”
অনেক ত্যাগের মাধ্যমে এ দেশ থেকে হাসিনাকে বিদায় করতে পেরেছি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আসুন সব রাজনৈতিক দল, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। একটা কথা বলতে চাই, কেউ ৭১ কে কটাক্ষ করে কথা বলবেন না। ২৪ কে কটাক্ষ করলে যেমন মানুষ মেনে নেবে না, ৭১ কে কটাক্ষ করলেও মানুষ তা মেনে নেবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “লাকসাম সেই এলাকা যেখানে বিগত সরকারের সময় মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। আপনাদের একজন মন্ত্রী ছিলেন তাজুল ইসলাম, তাই না! তার অত্যাচারে নির্যাতনে এলাকার মানুষ এখানে আসতে পারতো না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘর ভেঙে দিতো। তুলে নিয়ে যেতো। তিনি এখন কোথায় পালিয়েছেন? কোথায় পালিয়েছেন তাও জানেন না আপনারা। অত্যাচার নির্যাতন ও অবিচারকারীদের তাদের পরিণতি এরকমই হয়।”
লাকসাম থেকে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন পারভেজের বিষয়ে তিনি বলেন, “লাকসাম থেকে দু’জন গুম হন। একজনের সাইফুল ইসলাম হিরো। আরেকজন হুমায়ুন পারভেজ। তাদের সন্তানরা এখানে আছে। তাদের বাবা গুম হওয়ার পর যখন বেগম জিয়ার সঙ্গে তারা দেখা করতে গিয়েছিল, তাদের চেহারা এখনো মনে পড়লে বুক ফেটে যায়। তারা এখনো মনে করে, তাদের বাবা ফিরবেন।”
লাকসাম স্টেডিয়াম মাঠে কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) এম আনোয়ারুল আজিম, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ভিপি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু প্রমুখ।