কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও ফায়ার সার্ভিস পুকুরপাড়ের নিজ বাড়ি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফাইরুজ অবন্তিকা নামের ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে তাকে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অবন্তিকার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. আব্দুল করিম খন্দকার। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে।
ফাইরুজের কয়েকজন বন্ধু জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফাইরুজের অ্যাকাউন্ট থেকে আত্মহত্যার পোস্ট দেখে সহপাঠীরা তার বাড়িতে ফোন করেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
তারা আরও জানান, ফাইরুজ আত্মহত্যার পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ করেন। এছাড়াও ওই পোস্টে একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে ছেলেটির পক্ষ নিয়ে তার সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ করেন।
ফাইরুজের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফিরোজ হোসেন। তিনি বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ওই ছাত্রী আত্মহত্যার আগে একটি নোট লিখে গেছেন। পুলিশ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে গেছে। তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা হবে।”
এদিকে, ফাইরুজের আত্মহত্যার খবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ অবস্থায় ফাইরুজের ওই সহপাঠীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং ওই সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অভিযুক্ত ছাত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ওই সহকারী প্রক্টর বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেছেন, “আমি মেয়েটিকে দেখেছি প্রায় দেড় বছর আগে। তাদের কয়েকজন সহপাঠী প্রক্টর অফিসে এসেছিলেন। সে সময় তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল স্যার, আমি ও আরও কয়েকজন সহকারী প্রক্টর অফিসে ছিলাম। মেয়েটি ফেইক আইডি ব্যবহার করে তার বন্ধুদের মেসেজ পাঠাত। আমাদের বলা হয়েছিল যে, থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পরে মেয়েটি তার দোষ স্বীকার করে। তখন তার পরিবারের সদস্যরা জিডি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন।”
তিনি আরও বলেন, “এরপর প্রক্টরিয়াল টিমের সবাই বৈঠক করে তাকে তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কোনো সমস্যা না থাকলে জিডি প্রত্যাহার করা হবে। আমি কখনো মেয়েটির সঙ্গে একা কথা বলিনি। দয়া করে ঘটনার তদন্ত করুন। আমি দোষী হলে আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তু দয়া করে আমাকে আগে থেকে দোষী বানাবেন না। নইলে আমাকেও আত্মহত্যা করতে হবে।”