ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সেন্সর সনদ বাতিল করে “আদম” সিনেমার প্রদর্শন ও প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, আদম সিনেমার পরিচালক আবু তৌহিদ হিরন, প্রযোজক তামিম হোসাইনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) অ্যাডভোকেট মো. ইসমাঈল হোসেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা জামিল হাসানের পক্ষে রিটটি করেন।
এর আগে, বুধবার জামিল হাসান “আদম” সিনেমার সেন্সর সনদ বাতিল ও প্রদর্শন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তথ্যসচিব বরাবর আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরে মুক্তির জন্য ‘আদম' নামের একটি বাংলা সিনেমার ট্রেইলার প্রকাশিত হয়েছে। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ফেসবুক ও ইউটিউবসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে সিনেমাটির ট্রেইলার এবং নেটিজেনদের মন্তব্য দেখেছি। দেশের নানা পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট পড়ে জানতে পারি, ২০২২ সালে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড গত ১৯ নভেম্বর সিনেমাটি প্রদর্শনের জন্য সেন্সর সনদ ছাড়পত্র দিয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সিনেমাটির ট্রেইলার ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাতে জানা যায়, সিনেমার গল্পে আদম নামে একটি ছেলের সঙ্গে কামিনী নামে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায় কামিনী অন্তঃসত্ত্বা হয়। কুমারী কামিনীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়া নিয়ে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট হয়। সেখানে দেখা যায়, মুসলিম সমাজে ফতোয়াকে উসকে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম্য বিচারে কামিনীকে মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ করে মারার ফতোয়া দেয় ইমাম সাহেব। হিন্দু পুরোহিত কামিনীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত দেয়। বৌদ্ধ ধর্মপ্রধান জীব হত্যা মহাপাপ ও খ্রিষ্টান যাজক অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলোয় আনতে মতামত দেয়। শালিসের মধ্যে কেউ একজন আজান দেয়। তখন তাকে থামিয়ে বলে, এই থাম। আজান দিচ্ছে…তুই জানস ও হিন্দু না মুসলমান।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগণ মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু সিনেমাটিতে মুসলিম, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানের পর ঈদ-উল-ফিতরে এ ধরনের ধর্মীয় উসকানিমূলক সিনেমা মুক্তি দেওয়া হলে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে ফেসবুক ও ইউটিউবেও নেটিজেনরা সিনেমাটির বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মের অনুশাসন মেনে চলতে আগ্রহী। সিনেমাটিতে একই সঙ্গে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো সংলাপ ও দৃশ্য রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়, যা আমাদের সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ অবস্থায় সিনেমাটির সেন্সর সনদ/ছাড়পত্র বাতিল করে প্রদর্শন ও প্রচার বন্ধ করা প্রয়োজন।