কোনো পর্যটন স্থানের সৌন্দর্য গৌণ হয়ে যায় যখন সেখানে ভ্রমণকালীন নিরাপত্তার প্রসঙ্গ আসে। একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে সে দেশের পর্যটন শিল্পের ওপর। সামগ্রিকভাবে নিরাপদ ভূখণ্ড নিশ্চিন্তে ভ্রমণের রসদ যোগায়। এই দিক থেকে নিমেষেই শীর্ষস্থানটি পেয়ে যেতে পারে আইসল্যান্ড নামের দেশটি। কেননা ২০২৩ সালের বৈশ্বিক শান্তি সূচক অনুসারে দেশটি অর্জন করেছে সর্বনিম্ন স্কোর; ১.১২৪।
এই সর্বনিম্ন মান বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থার দিকে নির্দেশ করে। এ নিয়ে দেশটি টানা ১৬ বার বিশ্বের এক নম্বর শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে মনোনীত হল। নর্ডিক এই দেশটিতে ঘুরে বেড়ানো নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, আইসল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানসহ যাবতীয় ভ্রমণ খরচ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভৌগোলিক অবস্থান
উত্তর আটলান্টিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী একটি দ্বীপ দেশ আইসল্যান্ড। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মধ্যবর্তী আটলান্টিক রিজের ওপর অবস্থিত এই দেশটি বিশ্বের ১৮তম বৃহত্তম দ্বীপ। গ্রেট ব্রিটেনের পরে এটিই ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এর প্রধান দ্বীপ ১ লাখ ১ হাজার ৮২৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। সমগ্র দেশটির ১ লাখ ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৬২.৭% তুন্দ্রা অঞ্চল।
স্থলভাগের দিক দিয়ে উত্তর আমেরিকার তুলনায় আইসল্যান্ড ইউরোপের বেশি কাছাকাছি। কিন্তু জলভাগের দিক থেকে এটি উত্তর আমেরিকার দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে কাছে। তবে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং ভাষাগত কারণে আইসল্যান্ড ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নামকরণের ইতিহাস
নবম শতাব্দীতে একদিন রাফনা-ফ্লোকি নামের একজন নর্সম্যান পশ্চিম ফিওর্ড্স অঞ্চলের এক পর্বতে আরোহণ করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি বরফ ও হিমশৈলে ভরা একটি সংকীর্ণ সমুদ্র খাঁড়ি দেখতে পান। এমন দৃশ্য দেখে তিনি এই বিস্ময়কর ভাসমান জায়গাটির নাম দেন আইসল্যান্ড।
এখানেই শেষ নয়; আইসল্যান্ড নিয়ে লোকমুখে আরও মুখরোচক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একদা কিছু নর্সম্যান ভাগ্যগুণে এই দ্বীপে সুন্দর সবুজের সমারোহ খুঁজে পান। এমন জাদুকরী ভূখণ্ড দেখে মুগ্ধ হয়ে তারা ভাবেন যে, এখানে শুধু তারাই থাকবেন। এ কারণে অন্যান্য নর্সম্যানদের এই ভূমি থেকে দূরে রাখতে দ্বীপের নাম দেন আইসল্যান্ড। কারণ এই নাম শুনে আপাত দৃষ্টে মনে হবে এখানে বরফ ছাড়া আর কিছুই নেই।
এরকম ফন্দি এঁটে তারা সবাইকে দূরে রাখতে পেরেছিল শুধুমাত্র দুঃসাহসী এবং শক্তিশালী ভাইকিংদের ছাড়া। ভাইকিংরা বরফে বিস্তৃত ভূমিকে ভয় পায় না। আইসল্যান্ডকে বর্তমান রূপ দেওয়ার পেছনে এই নির্ভীক ভাইকিংরাই দায়ী।
বাংলাদেশ থেকে আইসল্যান্ড ভ্রমণ
আইসল্যান্ডের পর্যটন ভিসা
শেনজেনভুক্ত প্রতিটি দেশের মত আইসল্যান্ডে ঘুরতে যেতে হলেও বাংলাদেশিদের শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসার মাধ্যমে ১৮০ দিন সময়সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত যেকোনো শেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা যাবে। ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো নিম্নরূপ:
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫/৪৫ মিলিমিটার)
- আইসল্যান্ডে পৌঁছার পর থেকে অন্তত ৩ মাস মেয়াদ থাকা পাসপোর্ট, যার কমপক্ষে দুটি পৃষ্ঠা ফাঁকা আছে।
- সম্পূর্ণ পূরণ করা আবেদনপত্র (ভিসা আবেদন ফর্ম নম্বর: ১১৯০৩১)
- স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ সাপেক্ষে গ্যাস/বিদ্যুৎ/পানি বিল
- বিবাহিত আবেদনকারীর ক্ষেত্রে কাবিন নামা, তালাকপ্রাপ্ত আবেদনকারীর ক্ষেত্রে তালাক নামা, এবং বিপত্নীক বা বিধবার ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর মৃত্যু সনদ
- স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান একসঙ্গে ভ্রমণ করলে বিবাহের সনদপত্র
অপ্রাপ্ত বয়স্ক আবেদনকারীর ক্ষেত্রে
- তার নিজের জন্ম সনদ
- যদি পিতামাতা দুজনেই একসঙ্গে বা আইনি অভিভাবক সঙ্গে ভ্রমণ না করলে সন্তানের ভ্রমণে পিতামাতা বা অভিভাবকের সম্মতি
- পিতামাতা বা আইনি অভিভাবকের পাসপোর্ট
চাকরিজীবী হলে লাগবে চাকরির সনদপত্র, যেখানে উল্লেখ থাকবে:
- কোম্পানির ঠিকানা, টেলিফোন, ও ফ্যাক্স নম্বর
- সাইনিং অফিসারের নাম ও পদবী
- আবেদনকারীর নাম, পদবী, বেতন এবং কত বছর ধরে চাকরি করছেন
ব্যবসায়ী হলে তার ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধক কর্তৃক জারিকৃত সনদপত্র
ছাত্র হলে-
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি পত্র বা আইডি কার্ড
- ক্লাস চলাকালীন সময়ে ভ্রমণ করলে স্কুল কর্তৃক অনুমোদিত ছুটির প্রশংসাপত্র, যেখানে থাকবে স্কুলের সম্পূর্ণ ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দানকারী ব্যক্তির নাম এবং পদবী।
- স্কুল থেকে ভ্রমণ আয়োজন করা হলে স্কুল থেকে জারি করা চিঠি যেখানে উল্লেখ থাকবে ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল এবং সুনির্দিষ্ট গন্তব্য।
- আবেদনকারীর বিগত ৬ মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
- পিতামাতা/অভিভাবক/অন্য কেউ ভ্রমণের খরচ বহন করলে তার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
- হোটেল বুকিং এবং ট্যুর বুকিং-এর নথিপত্র।
- প্লেনে আসা-যাওয়ার টিকেট।
- ন্যূনতম ৩০ হাজার ইউরো বা ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬৩৭ টাকা (১ ইউরো = ১২৫ দশমিক ৫৯ বাংলাদেশি টাকা) সমমানের ভ্রমণ ও চিকিৎসা বীমা। বীমার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা https://visa.vfsglobal.com/one-pager/sweden/bangladesh/english/pdf/Embassy_approved_Insurance_company_list_270814.pdf এই লিঙ্ক থেকে পাওয়া যাবে।
শেনজেন ভিসা ফি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৮০ ইউরো বা ৯,২০০ টাকা, ৬ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ৪০ ইউরো বা ৪,৬০০ টাকা। ৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য কোনো ভিসা ফি নেই।
আইসল্যান্ড যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিভিন্ন দেশ হয়ে আইসল্যান্ড পৌছা যায়। এগুলোতে গড়পড়তায় আসা-যাওয়ার প্লেন ভাড়া লাগতে পারে সর্বনিম্ন ১,১৭৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪,৮০১ মার্কিন ডলার। সর্বনিম্ন খরচের ট্রিপটি ভারতে দুটি, দুবাইয়ে একটি, এবং ইটালিতে একটি; মোট চারটি ট্রানজিট নিয়ে আইসল্যান্ডের সুডোর্নেসজাবের-এ পৌঁছাবে।
ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়
উত্তরীয় বা বলয় রেখা দেখার জন্য আইসল্যান্ডে যাওয়ার সেরা সময় হল সেপ্টেম্বর এবং মার্চের মাঝামাঝি সময়টা। উত্তর গোলার্ধের ভয়াবহ শীত এড়িয়ে উষ্ণ মৌসুম উপভোগ করার জন্য জুন থেকে আগস্ট মাস সেরা। এই মৌসুমে মনে হবে দিন যেন আর শেষ হচ্ছে না। এ সময়ের সূর্যালোককে বলা হয় মধ্যরাতের সূর্য, যা আইসল্যান্ডের সেরা আকর্ষণের মধ্যে একটি। এছাড়াও নজর কাড়বে সবুজ গ্রামাঞ্চল, যা শীতকালে একদমই দেখা যায় না।
পর্যটকদের জন্য আইসল্যান্ডে সেরা আকর্ষণগুলো
পিঙভ্যালির জাতীয় উদ্যান
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মনোনীত এই দর্শনীয় জায়গাটিতে রয়েছে আইসল্যান্ডের সবচেয়ে পরিচিত যাত্রাপথ গোল্ডেন সার্কেল। আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টের আদি বাসস্থানের দেখা মিলবে এই পিঙভ্যালিতে। দশম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই সংসদ বিশ্বের প্রাচীনতম সংসদ হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক হ্রদ পিঙভ্যালাভ্যাট্ন এই জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এর সিলফ্রা অংশটি সৃষ্টি হয়েছে ইউরেশীয় এবং উত্তর আমেরিকার টেকটোনিক প্লেটের চলাচলের কারণে। এখানে সাঁতার কাটা মানে আক্ষরিক অর্থে দুটি মহাদেশের মধ্যে সাঁতার কাটা।
গালফস জলপ্রপাত
জলপ্রপাতে ভরা এই নর্ডিক দেশে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ধারাটির নাম গালফস। এখানে ভিটা নদীর স্রোত সংকীর্ণ গিরিখাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুটি স্বতন্ত্র ধারা হয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।
গোল্ডেন সার্কেলের ঠিক নিচেই এর অবস্থান হওয়ায় এই অঞ্চলে পর্যটকদের ভিড়টা বেশি হয়। শীতে এখানকার চারপাশ ভরে যায় তুষারে, আর গ্রীষ্মে সেই শ্বেতশুভ্রতার জায়গা দখল করে সবুজ। অভিকর্ষের প্রভাবে পড়ন্ত জলের ছিটাফোঁটাগুলো যখন মুক্ত শূন্যে একত্রিত হয়, তখন গালফস সৃষ্টি করে রংধনু। এই অপার্থিব বিস্ময়কর দৃশ্য কখনই ভোলার নয়।
উত্তর গোলার্ধের বলয়রেখা
আইসল্যান্ডকে যদি এক বাক্যে প্রকাশ করতে হয়, তাহলে বলতে হবে এটি উত্তরীয়র দেশ। এমন জাদুকরী দর্শনীয় স্থান সমগ্র পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে রোদের আলোর মিথস্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট এই নৈসর্গ উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে সবচেয়ে ভাল দেখা যায়। এর মধ্যে উত্তরের প্রতিনিধি হচ্ছে আইসল্যান্ড, যেখানে শীতকালীন রাতের আকাশে চলে এই সবুজ, লাল এবং নীলের বর্ণীল আয়োজন।
ব্লু লেগুণ
স্পা, পানির নয়নাভিরাম রঙ, এবং পানির আধ্যাত্মিক গুণের জন্য বিখ্যাত এই ব্লু লেগুণ। ৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে তৈরি হওয়ার পর থেকে এই দীঘি স্থানীয়দের শরীর ও মন পরিশোধনের মাধ্যম হয়ে আসছে। স্থানীয়রা এখনও বিশ্বাস করে যে, এই দীঘির পানিতে রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে।
শীতকালে ভ্রমণের জন্য সেরা জায়গা এই দীঘি। কেননা এই জলে ভেসে থাকার সময় মাথার উপরে দেখা যাবে উত্তরের বলয়রেখা।
আইসল্যান্ডের সেরা খাবার
ইউরোপের অদ্ভুত খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এখানকার ফার্মেন্টেড হাঙ্গরের মাংস। হাঙ্গরের মাংসকে মাটিতে কয়েক মাস পুঁতে রাখার পর ভেজে বানানো হয় এই খাবার। এগুলোর আবার রয়েছে বিভিন্ন ধরন। তন্মধ্যে হাকার্ল নামের ফার্মেন্টেড হাঙর এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার।
এই ভাইকিংদের দেশে নবম শতাব্দীতে প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা পাহাড়ের ঢালে মেষ চড়াত। এখনও সেই জায়গায় মেষ চড়ানো হয় এবং এই মেষ বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ জাতগুলোর একটি। প্রাকৃতিক ভাবে প্রজনন ও লালন-পালন করা বিধায় বিশ্ব জুড়ে এগুলোর মাংসের রয়েছে আলাদা কদর। অল্প তাপে ভাজা এই ভেড়ার মাংস এবং মাংসের স্যুপ এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
দ্বীপদেশ বলে এখানকার অধিকাংশ রান্নায় প্রধান উপাদান থাকে সাগরের মাছ। তন্মধ্যে হ্যাডক বা শুকনো মাছগুলো বেশি জনপ্রিয়।
থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ
আইসল্যান্ডে থাকার জন্য একজন ব্যক্তির খরচ হতে পারে কমপক্ষে ১৩ হাজার ১৯১ আইসল্যান্ডিক ক্রোনা। এটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ হাজার ৬৮ টাকার সমতুল্য (১ আইসল্যান্ডিক ক্রোনা = ০ দশমিক ৮৪ বাংলাদেশি টাকা) তিনবেলা খাবার বাবদ দিনপ্রতি বাজেট রাখতে হবে ৪,৮৭০ ক্রোনা বা ৪,০৮৬ টাকা।
পুরো এক সপ্তাহ ভ্রমণের জন্য বাজেট রাখা যেতে পারে মাথাপিছু প্রায় ২ লাখ ৭৩৪ ক্রোনা (১ লাখ ৬৮ হাজার ৪২১ টাকা)। একই সময়সীমায় দম্পতিদের জন্য খরচ হতে পারে প্রায় ৪ লাখ ১ হাজার ৪৬৮ ক্রোনা (৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪২ টাকা)। এর মধ্যে থাকা-খাওয়াসহ দেশের ভেতরে নানা জায়গায় যাতায়াত খরচ অন্তর্ভুক্ত।
ভ্রমণকালীন কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা
- আইসল্যান্ডের শহর ও শহরের উপকণ্ঠে বন্যপ্রাণীদের অবাধে বিচরণ রয়েছে। সাধারণত অভ্যস্ত না থাকায় বিদেশি পর্যটকদের অনেকেই এদের মুখোমুখি হয়ে চমকে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে যে, এমন চমকের রসদ নিতে যেয়ে তাদের চলাচলে যেন কোনো রকম বাধাগ্রস্ত না করা হয়।
- শুধু ঠাণ্ডাতেই নয়, এখানে বৈরি আবহাওয়া গরমেও হতে পারে। তাই যেকোনো অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়াতে আগে থেকে স্থানীয় আবহাওয়ার খোঁজ-খবর রাখতে হবে। বিশেষ করে ভারী ও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে এবং আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি এলাকাগুলোর আবহাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
- সৈকত ধরে হেটে যাওয়ার সময় কখনও আইসবার্গে চড়ে বসা যাবে না। প্রথমবারের ভ্রমণে হিমবাহের ভেতর হাহাহাটি না করাই ভালো।
- উষ্ণ ঝর্ণা পরিদর্শনের সময় নিরাপত্তা সীমারেখার ভেতরে থাকতে হবে। বিশেষ করে দমকা বাতাসের দিনে জলপ্রপাত থেকে অনেকটা দূরে থাকা জরুরি।
- পর্বতারোহণের সময় হিমবাহের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ভাটার সময় ছাড়া পাহাড়ি পথগুলোতে বিচরণ করা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই আগ্নেয়গিরি, হিমবাহ বা তুষারপাতের এলাকায় হাইকিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে সঙ্গে অভিজ্ঞ গাইড রাখা উত্তম।
শেষাংশ
প্রতিবার বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বিশ্ব পরিব্রাজকদের নিকট আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য আইসল্যান্ড। এই নিরাপত্তার অধিকাংশ কৃতিত্বটাই দেশটির ভৌগোলিক অবস্থানের। অবশ্য বরফাচ্ছাদিত ভূখণ্ড এবং আগ্নেয়গিরির এই আশ্রয়স্থলটি নিমেষেই রূপ বদলে হয়ে যেতে পারে বিপজ্জনক। তাই সেনজেনভুক্ত দেশটিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসার পাশাপাশি নিরাপত্তার পূর্বশর্তগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। ভ্রমণকালীন সতর্কতাগুলো অনুসরণ করা হলে শীতের আইসল্যান্ড ভ্রমণও হয়ে উঠতে পারে মনে রাখার মত একটি স্মৃতি।