গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান বন্যার করাল গ্রাসে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল। এর মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে ফেনী, কুমিল্লা, এবং নোয়াখালীবাসীরা। সেনাবাহিনী ও নানা সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের পাশাপাশি দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরাও ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে বিশাল পরিসরে। তবে হেলিকপ্টার ও স্পিড বোট ব্যবহারের পরেও সমন্বয়হীনতার কারণে এই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক অসহায় মানুষ। একই সঙ্গে ভলান্টিয়ারদেরও পড়তে হচ্ছে নানাবিধ বিড়ম্বনা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে।
এই প্রতিকূলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে তরুণ ভলান্টিয়ারদের কিছু ব্যাপারে দূরদৃষ্টি এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। চলুন, বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ ও নিরাপদ উদ্ধার কাজে অপরিহার্য বিষয়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী
তৈরি খাবার
বুক সমান পানিতে এ সময় প্রাণ বাঁচানোই দায় হয়ে পড়ে। বহু কষ্টে কোনো শুকনো জায়গায় আশ্রয় নেওয়া সম্ভব হলেও সেখানে রান্নার চুলা খোঁজা চিন্তারও অতীত। এ রকম অবস্থায় থাকা অসহায় মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে তৈরি খাবার। তাই চাল, ডাল, তেল বা চিনির বদলে দেওয়া উচিত মুড়ি, চিড়া, খেজুর, রুটি, গুঁড় ও সিদ্ধ আলু। এছাড়া বিস্কুট, বাদাম, ওট্স বার, বা কেকের মতো মিষ্টি জাতীয় খাবার অনেকক্ষণ দেহে শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। সম্ভব হলে খিচুড়ি ও ভাত ভর্তা নেওয়া যেতে পারে।
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি-বিশোধন ট্যাবলেট
বন্যাকালে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। তাই উত্তম হচ্ছে বোতলজাত খাবার পানি নিয়ে যাওয়া। এর বিকল্প হিসেবে পানি-বিশোধন ট্যাবলেট বা ফিটকিরি নেওয়া যেতে পারে। এতে বিশেষ করে গৃহবন্দি মানুষেরা উপকৃত হবে, কেননা এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই পানি বিশুদ্ধ করে নিতে পারবে।
শিশুর খাবার ও পরিধেয়
নবজাতক থেকে শুরু করে বাড়ন্ত বয়সীসহ প্রতিটি শিশুই প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে বন্যার সময়। তাই অন্যান্য খাবার ও পানির সঙ্গে শিশুদের খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এই তালিকায় থাকতে পারে গুঁড়া দুধ, সিরিয়াল, ল্যাক্টোজেন, সুজি, জুস, প্যাকেট স্যুপ ও চিপস। এছাড়া ভেজা বা ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা এবং অপরিষ্কারজনিত স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে মুক্ত রাখতে শুকনো পোশাক ও প্যাম্পার্স নিতে হবে।
ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম
পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ঠাণ্ডা লাগা বা জ্বর, কাশি ও মাথা ব্যথার ওষুধগুলো সংগ্রহে রাখতে হবে। বিশেষ করে এ সময়ের সাধারণ ব্যাধি ডায়রিয়ার জন্য স্যালাইন সঙ্গে রাখা আবশ্যক। নানা ধরনের ক্ষত নিরাময়ের জন্য দরকার হবে ব্যান্ডেজ ও স্যাভ্লনের মতো প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম।
সাপ, মশা ও পোকামাকড় নিরোধক
প্লাবনের সময় সাপ, মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। সাপকে দূরে রাখার জন্য গাঁদা ফুল, কৃমি কাঠ, রসুন, লবঙ্গের তেল বা ভিনেগার নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মশা ও পোকামাকড়ের জন্য কয়েল, স্প্রে, ত্বকে লাগানোর লোশন ও কিলার ব্যাট নিতে হবে।
এগুলো সরবরাহের সময় অবশ্যই ব্যবহারের শর্তগুলোও জানিয়ে দেওয়া জরুরি। কারণ স্প্রে নবজাতকদের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এ সময় গ্যাস পাইপ লিক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এর মাঝে কয়েল জ্বালাতে গেলে তা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে।
ভেজা অবস্থা থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় পরিধেয়
একদিকে মাথার ওপর দিনভর বৃষ্টি, অন্যদিকে নিচে বুক সমান পানি। এ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা অবস্থায় থাকায় শরীর ব্যথা, ঠাণ্ডা, কাশি বা জ্বর দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় শুকনো পোশাক, ছাতা, ও রেইন কোট অনেক উপকারে আসতে পারে। এছাড়াও লাইফ জ্যাকেট এবং নারীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড নেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং মোবাইল সংরক্ষণের জন্য ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ বা ফোল্ডার, প্লাস্টিকের জিপার কিংবা নিদেনপক্ষে পলিথিন দেওয়া উচিত।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী
বন্যার দূষিত পানি ও আর্দ্র পরিবেশে জন্ম নেওয়া জীবাণু থেকে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দরকার হবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ডিশ ওয়াশিং পাউডার বা ভীম বার।
ব্যাটারিসহ টর্চ লাইট
প্লাবনের আগ্রাসনে বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। সন্ধ্যার নামার পরে সেসব এলাকা হয়ে ওঠে আরও বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে উপযুক্ত উপায় হচ্ছে ব্যাটারিচালিত টর্চ লাইট ব্যবহার। মোমবাতি বা দেওয়াশলাই না ব্যবহার করাই ভালো। কারণ এ সময় গ্যাস পাইপ লিকেরও ভয় থাকে।
পশুর খাদ্য
বন্যা-দুর্গতদের মধ্যে একটা বিরাট অংশের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় গবাদি পশু। অনেকেই তাদের গৃহস্থালি গরু বা ছাগল নিয়ে পানির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এই পশুগুলোর জন্য আলাদাভাবে কিছু খাবার (যেমন ভুষি, লবণ, বা খৈল) সংগ্রহে রাখা উচিত। এছাড়া রাস্তার কুকুর-বিড়ালও মানুষের মতোই বিপন্ন হয়ে আশ্রয় ও খাবারের সন্ধান করছে। তাই খাবার সরবরাহের সময় এদের দিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
বন্যার্তদের স্বেচ্ছাসেবা দানে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন
সঠিক পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতি
কতদূর পর্যন্ত বিতরণ চলবে তা ঠিক করে ত্রাণসামগ্রী প্যাকিং করা হলে হিসাব এবং বিতরণ উভয় ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। প্রস্তুতির সময় গ্রুপের প্রত্যেকের কার কি কাজ হবে তা ঠিক করে নেওয়া আবশ্যক। ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার কাজ, যোগাযোগ, হিসাব রাখা, পুনর্বাসনের জন্য নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা, গ্রুপের সদস্য, আর্মি ও স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়; এই প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথক দায়িত্বশীল নিয়োগ করতে হবে।
এই সমন্বয় সাধনের নানাবিধ সুফলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো ঠিক কোথায় কোথায় জরুরি সরবরাহ প্রয়োজন তা জানতে পারা। এতে করে ত্রাণের অপচয় হয় না এবং অধিক সংখ্যক মানুষকে সহায়তা করা যায়।
স্থানীয় কাউকে সঙ্গে রাখা
প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর পথঘাট অপরিচিত থাকায় সঠিক জায়গায় সহযোগিতা পৌঁছাতে দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই উত্তম হচ্ছে স্থানীয় কাউকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করা। এটি ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তার জন্যও অত্যাবশ্যক। কারণ অনিশ্চিতভাবে পানিপথে যাতায়াতের সময় গ্রাম বা শহরের পথ থেকে বেরিয়ে কেউ ভুলে সমুদ্রের দিকে চলে যেতে পারে।
সাঁতারে দক্ষ লোকদের নিয়ে ভলান্টিয়ার টিম গঠন
বর্তমানে বন্যার পানির উচ্চতা যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, সেখানে ভলান্টিয়ারদের সাঁতার জানার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায়, অনর্থক দুঃসাহসিকতা দেখাতে গেলে উল্টো দলের বাকি সদস্যদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। তাছাড়া সাঁতার না জানা থাকলে অন্য ভাবেও ভলান্টিয়ার হিসেবে অংশ নেওয়া যায়। যেমন অর্থ সংগ্রহ ও তা দিয়ে ত্রাণ কেনা, রওনা দেওয়ার মুহূর্তে ট্রাকে ত্রাণের তদারক ও হিসাব করা।
যারা পানিবন্দি মানুষের সাহায্যে যাবেন, তাদের অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে। কারণ সেখানে তাদের ট্রাকে বা নৌকায় অল্প একটু ঘুমিয়ে পার করতে হতে পারে ২ থেকে ৩ দিন। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে উদ্ধার কাজ এবং সেখানে ত্রাণ বিতরণ যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ।
নৌকায় খুব বেশি লোক না নেওয়া
উদ্ধারকারীদের সংখ্যা বেশি হলে নৌকা বা স্পিডবোটে বন্যা-দুর্গতদেরই জায়গা হবে না। তাই সর্বোচ্চসংখ্যক জীবন বাঁচানোর তাগিদে একদম যতজন না হলেই না, ততোজনকে নিতে হবে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় কম লোক নিলে, সবার উপর প্রচণ্ড ধকল যাবে।
উদ্ধার করা মানুষদের নৌকায় জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন থাকা দরকার। অতিরিক্ত লোক নিলে নৌকা উল্টে বা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া ত্রাণ দেওয়ার সময়েও নৌকা একটু দূরে রেখে কয়েকজনকে পানিতে নেমে পড়তে হবে। তারপর নৌকা থেকে ত্রাণ হাতে হাতে নিয়ে বন্যা-কবলিতদের দিতে হবে। অন্যথায়, স্থলভাগে আশ্রয়ে থাকা লোকদের একদম কাছাকাছি চলে গেলে তাড়াহুড়ো করে অনেকে ত্রাণ নিতে নৌকায় উঠে পড়তে পারে।
নৌকার জ্বালানির দিকে খেয়াল রাখা
কতদূর যাওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে ফিরে আসা পর্যন্ত হিসাব করে পরিমাণ মতো জ্বালানি তেল নৌকায় ভরে নিতে হবে। উদ্ধারকারী ও মালামালের নিরাপত্তার স্বার্থে রওনা দেওয়ার পূর্বে স্পিড বোট বা নৌকার কারিগরি দিকগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। তা না হলে মাঝপথে নৌকা অচল হয়ে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
উপযোগী পোশাক ও নিরাপত্তা সামগ্রী
ভলান্টিয়াররা তাদের পরিধেয় হিসেবে যথেষ্ট হালকা পোশাক ও ভালো গ্রিপযুক্ত স্যান্ডেল পরবেন। ভারী জামা-কাপড় পরলে দ্রুত কাজ করতে সমস্যা হবে। তাছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গায়ে লাইফ জ্যাকেট এবং শক্ত দড়ি পরার প্রয়োজন হবে, তাই আগে থেকেই শরীর হালকা রাখা দরকার।
নিরাপত্তা সামগ্রী হিসেবে সঙ্গে নিতে হবে টর্চ, ছুরি ও বড় শক্ত দড়ি। লাইফ জ্যাকেটের ওপর দিয়ে কিছু দড়ি গায়ে পেঁচিয়ে রাখা উচিত, কেননা যেকোনো সময় এগুলো কাজে লাগতে পারে। দুর্গম জায়গায় দূর থেকে ডাকা এবং প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য হ্যান্ড মাইক কাজে লাগবে।
শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার দেওয়া
একসঙ্গে প্রচুর মানুষের উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধকতা থাকা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। যার সবচেয়ে বেশি সাহায্য দরকার সে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়।
সাপ ও মশার উপদ্রবে সতর্ক থাকা
শুধু বন্যাপীড়িত লোকদেরই নয়, সাপ ও মশার উপদ্রবে ভলান্টিয়ারদের নিজেদেরও সতর্ক থাকতে হবে। সাবধানতা হিসেবে টিমের সঙ্গে লাঠি ও মোটা রশি রাখা যেতে পারে। ত্রাণ সামগ্রীর বাইরে নিজেদের জন্যও আলাদা সাপ ও মশা নিরোধক রাখতে হবে।
নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা
যথেষ্ট শক্ত-সমর্থ হওয়ার পরেও ভলান্টিয়ারদের নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদাসীন হওয়া যাবে না। কেননা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। নিদেনপক্ষে অল্প ক্ষত, হালকা মাথাব্যথা বা ঠাণ্ডা জ্বর থেকেও দেখা দিতে পারে চরম স্বাস্থ্য জটিলতা। তাই প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে তাদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সর্বদা সঙ্গে রাখতে হবে। বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে ছাতা বা নিদেনপক্ষে পলিথিন ব্যবহার করতে হবে।
সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মধ্যে থাকা
পানিতে প্লাবিত এলাকায় বন্যাপীড়িত মানুষের খোঁজে আকস্মিক পথ হারানোটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারও স্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য যোগাযোগের প্রয়োজন। এমনকি সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রেও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখা অপরিহার্য। তাই অবশ্যই মোবাইল ফোনকে সর্বদা সক্রিয় রাখতে চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখতে হবে। বন্যাকবলিত অঞ্চলে নেটওয়ার্কের ঝামেলা থাকায় সম্ভব হলে সব অপারেটরদের সিম সঙ্গে রাখা উচিত।
বৃষ্টির মধ্যে এই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো প্লাস্টিকের জিপার, ওয়াটারপ্রুফ হোল্ডার বা পলিথিনে সংরক্ষণ করা উচিত।
সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া
ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার অভিযানে যেয়ে অনেকেই বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। তাছাড়া যেকোনো প্রতিকূলতায় টিকে থাকার জন্য তাদের রয়েছে প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ। তাই নৌকার ব্যবস্থা করা না গেলে বা গভীর দুর্গম অঞ্চলে যেতে না পারলে ত্রাণ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা যায়। তারা সেগুলো সঠিকভাবে অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।
ছবি বা ভিডিও করা থেকে বিরত থাকা
পুরো কার্যক্রমের রেকর্ড রাখার জন্য যারা ছবি তুলছেন বা ভিডিও করছেন, তাদের বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু এর বাইরে ভ্লগিং বিশেষ করে ত্রাণ গ্রহীতাদের ক্যামেরাবন্দি করা তাদের জন্য মর্যাদাহানিকর। সঙ্গত কারণে যদি তাদের ছবি নিতেও হয় তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার আগে তাদের মুখ ঝাপসা করে দেওয়া উচিত।
তাছাড়া অসহায় মানুষের সাহায্যে যেয়ে ভ্লগিং করা স্থানীয়দের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই শুধুমাত্র যোগাযোগের প্রয়োজন ছাড়া স্মার্টফোনটি ব্যবহার না করাই উত্তম।
পরিশিষ্ট
বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে এই বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকার মাধ্যমে পুরো কার্যক্রমকে ভলান্টিয়াররা আরও ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে। প্রাথমিকভাবে উদ্দেশ্য থাকতে হবে সর্বাত্মক ভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোকে উদ্ধার করা। তারপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্য-বস্ত্র, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। সক্রিয় থেকে দীর্ঘ সময় ধরে এই সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ভলান্টিয়ারদের নিজেদের প্রতিও খেয়াল রাখা উচিত। উপরন্তু, নিজেদের গ্রুপের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন, অন্যান্য সংগঠন ও সেনাবাহিনীদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা অতীব জরুরি। কেননা এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সর্বাধিক সংখ্যক এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর কাছে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হবে।