Wednesday, March 26, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কোন পরিচয় দিলেন মৃত্যুঞ্জয়-সাকিবরা?    

বিসিবিকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এমন জঘন্য উগ্র ধর্মান্ধ মানসিকতার কেউ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ এএম

ক্রিকেটার তানজিম সাকিবের ব্রেনওয়াশে অন্যতম ভূমিকা রাখা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী তার বন্ধুর সমস্ত বক্তব্যের সপক্ষে একটা বড় লেখা লিখেছিল। সেখানে সে স্পষ্ট করে তার এবং তার বন্ধুর পক্ষ থেকে যে পয়েন্টগুলো ক্লিয়ার করেছে, সেগুলো হলো-

- দুনিয়াতে কোনো মানুষকে তারা খুশি করতে আসেনি, আল্লাহকে খুশি করাই তাদের লক্ষ্য। অর্থাৎ আল্লাহকে খুশি করার নামে তারা যা করছে, অর্থাৎ নারীবিদ্বেষ, অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ, বিজয় দিবস ও জাতীয় সঙ্গীত অস্বীকারের যে কর্মকাণ্ডগুলো, সেগুলো তারা চালিয়ে যাবে, এ নিয়ে কোনো ধরনের যৌক্তিক আলাপ প্রতিবাদ কিছুই তারা পরোয়া করবে না।

- তাদের বক্তব্য তারা কেবলই দ্বিন প্রচার করছে। এরপরে সে কোরআনের আয়াত ব্যবহার করে, “দুনিয়ার জীবন থেকে আখেরাতের জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আখেরাতই আসল জীবন”। এই আলাপ দিয়ে দ্বীন প্রচার থেকে তাদের কোনোভাবেই বিরত রাখা যাবে না বলে জানিয়েছে। পরের লাইনেই সরাসরি ইমোশনালি খেলতে চেয়েছে এভাবে,

“তারা কি বলতে চায় আমরা পর্দার আয়াত প্রচার করবো না? তাদের কথায় কি আমাদের সেটা অস্বীকার করা লাগবে? তারা মানবে না এটা তাদের বিষয়। নিশ্চয় এ বিধান মুমিনের জন্য, যারা মুমিন না তারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে থাকুক আমাদের সাথে তাদের কিসের খাতির।”

অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় প্রথমে তাদের ভয়াবহ কুৎসিত কথাবার্তা কোরানের আয়াত ব্যবহার করে নিষ্পাপ সাধারণ ধর্মপালন হিশেবে স্ট্যাব্লিশ করলো। এরপরে আচমকা পর্দার কথা টেনে আনলো। এমনভাবে বলতে থাকল, শুনে মনে হতে পারে সবাই পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, পর্দা করা যাবে না দাবি জানাচ্ছে। অথচ মূল ঘটনাটা একেবারেই উল্টো!

যে কারণে সবাই মৃত্যুঞ্জয়ের বন্ধু তানজিম সাকিবের যে বক্তব্যের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে, সেখানে পর্দা নিয়ে একটা শব্দও নাই। সাকিব মূলত ধর্মকে ব্যবহার করে নারীকে বাইরের সব পেশা বাদ দিয়ে ঘরের ভেতর আটকে রাখার পচাগলা দুর্গন্ধযুক্ত এক ফতোয়া তার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিল। 

লেখাটা হচ্ছে-

“স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়। স্ত্রীকে যেই স্বামী বলে- আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই।

আমি যা পাই তোমাকে খাওয়াব, সে তাকে রাজরানি হয়ে আছে। এখন সে রাজরানি না হয়ে কর্মচারী হতে চায়। আসলে স্ত্রী স্বামীর মর্যাদা বোঝেনি, স্ত্রী নিজের মর্যাদাও বোঝেনি। ঘর একটি জগৎ।

অসংখ্য কাজ রয়েছে। আজ ছেলেদের বেকারত্বের বড় কারণ হচ্ছে- মেয়েরা এগিয়ে আসছে, ছেলেরা কোনো চাকরি পাচ্ছে না। একটি ছেলেকে চাকরি দিলে পুরো পরিবারের উপকার হয়। (অতএব মা-বোনেরা নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে স্বামীর আনুগত্য ও বাসায় অবস্থান করে রানির হালাতে অবস্থান করুন। অতএব মা-বোনেরা দুনিয়া কামাতে যেয়ে আখেরাত না হারিয়ে ঘরে অবস্থান করে স্বামী-সন্তানের খেদমত করে দুনিয়া ও আখেরাত দুটিই কামাই করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।”

অথচ কী সুকৌশলে মৃত্যুঞ্জয় পুরো ঘটনাটা ঘুরিয়ে ডাহা মিথ্যাচারে এমনভাবে উপস্থাপন করলো যেন দেশে কেউ পর্দার বিধান মানতে পারছে না! দেশে পর্দা করতে দেওয়া হচ্ছে না! জোর করে মুসলিম নারীদের বেপর্দা চলতে বাধ্য করা হচ্ছে! সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইসলামের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন মানতে দেওয়া হচ্ছে না, দেশের ইসলাম ধর্ম পালন করতে গিয়ে কঠিনতম সঙ্কটে পড়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। 

এই কঠিন সময়ে শুধু মৃত্যুঞ্জয়-সাকিবই আপ্রাণ চেষ্টায় ঈমান ধরে রেখে দ্বিন ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারেস্টিং না!

লেখার শেষ প্যারায় আরও জঘন্য স্পর্ধার কথা বলেছে সে, লিখেছে-

“কুরআন এবং সহিহ হাদিসের শত শত দলিলে মেয়েদের পর্দার কথা বলা আছে। কেউ মানুক আর না মানুক আমাদের সে বিধান মানতেই হবে, সে বিধান আমরা প্রচার করবই। তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা (তা) অপছন্দ করে।( আস সফ ৬১,আয়াত ৮) আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী যদি মুমিন হয়ে থাক। (আল ইমরান ১৩৯)।”

এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, আমরা যারা এই দুই বন্ধুর চরম মিসোজিনিস্ট, রেসিস্ট এবং রিলিজিয়াস হেইট্রেড কথাবার্তার প্রতিবাদ করেছি, আমরা সবাই কাফের। আর তারা দুজন এবং তাদের মতো আরও যারা আছে, তারাই কেবল মুমিন! যেকোনো মূল্যে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। 

এই কথাটা বলতেও সে ব্যবহার করেছে কোরআনের আরেকটা আয়াত, যেন যেকোন ধর্মপ্রাণ মুসলমান কোরআনের আয়াত দেখে বাকিটা বোঝার বা জানার চেষ্টা না করেই তার কথায় একমত হয়। 

ঠিক এইভাবেই আমাদের সমাজে তুলনামূলক কমবয়সী তরুণ-তরুণীদের এবং সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ব্রেনওয়াশ করে উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো। তাদের কথাবার্তার মধ্যে কিছুক্ষণ পর পর থাকে কোরআনের আয়াত আর হাদিস। সেগুলো ব্যবহার করা হয় অর্থ বদলে, কথা ঘুরিয়ে অনেকসময় একেবারেই ভিন্ন অর্থে নির্জলা মিথ্যার মাধ্যমে। দুনিয়াকে, নিজের অতি মূল্যবান জীবনকে, পরিবারের আপনজনদের, প্রত্যেকের ওপর ন্যস্ত পারিবারিক ও সামাজিক নানা কর্তব্যকে এই উগ্র ধর্মান্ধের দল যতটা সম্ভব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরকাল বা আখিরাতকেই একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। 

তাদের বোঝানোর টোনটা হয় এমন যে, “আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই পার্থিব জগতের কোন নিয়ম-কানুন, দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের দরকার নাই, চাওয়া-পাওয়া কিংবা অর্জন-গর্বকে গুরুত্ব দেয়ার দরকার নাই, কারণ তাদের একমাত্র লক্ষ্যই স্রষ্টার সন্তুষ্টি!”

ধর্ম ব্যবহার করে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের জঘন্য অপব্যাখা আর মিথ্যা অর্থ শুনিয়ে ব্রেনওয়াশের ফলে ভিক্টিম নিজের অজান্তেই যৌক্তিক আলাপের সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সে প্রতিবাদ করে বলতে ভুলে যায় যে, স্রষ্টার সন্তুষ্টি বা পরকালের চিন্তার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ এই পার্থিব জগত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য নিজের জীবন, কারণ এই জীবনটাই এই মুহূর্তে বর্তমান, এর আগে কী ছিল বা পরে কী হবে সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা না থাকলেও এই জীবনটা অর্থবহভাবে যাপন করা কতটা গুরুত্বপুর্ণ, সেটা বোঝার মতো যথেষ্ট উন্নত চিন্তাশক্তি আছে আমাদের। বিবর্তনের নানা ধাপে সবচেয়ে উন্নত মস্তিষ্ক আমাদের, যদি জীবনটা এতোটাই ঠুনকো আর অর্থহীন হতো, তাহলে এত উন্নত চিন্তাশক্তি মানুষের থাকার কথা ছিল না। 

নিজের ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে এই জীবনকে মানবকল্যাণে কাজে লাগানো যাবে, পরিবার-পরিজনের প্রতি আমাদের কী দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, নিজের জন্মভূমির প্রতি কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, নিজের জীবিকার অর্জনের পাশাপাশি পেশাগত জায়গা থেকে দেশকে কীভাবে আরো সমৃদ্ধ, উন্নত করা যায়, মাতৃভূমির জন্য কীভাবে আরও গর্ব ও অর্জন বয়ে আনা যায়, এগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। 
যদি এগুলো গুরুত্বপূর্ণই না হত, তবে স্রষ্টা আমাদের সরাসরি পরকালেই নিয়ে যেতেন, 
এত এত দায়িত্ব কর্তব্য আর যাপনের জন্য এমন একটা জীবনের দরকার হতো না আমাদের। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ী কিংবা উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গিরা নিরীহ ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের ব্রেনওয়াশের জন্য এই জীবনকে তুচ্ছ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। যেন ধর্মের নামে তাদের পৈশাচিক বর্বরতা বাস্তবায়নের জন্য এই “সহজ-সরল” তানজিম সাকিবেরা ইহকাল তুচ্ছ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরকালে বেহেশত লাভ করতে আত্মঘাতি জঙ্গি হয়ে মানুষ হত্যা করতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। 

আত্মঘাতি হওয়ার আগে একবারের জন্যও যেন মানসপটে তাদের নিজের পরিবারের আপনজনদের চেহারা ভেসে না ওঠে, এই জীবনের রূপ-রস-গন্ধ-অর্জন-গর্ব কোনোকিছুই যেন তারা অনুভব করতে না পারে। 

ধর্মের মাধ্যমে এভাবেই তাদের অনুভূতিশূন্য জোম্বি বানানো হচ্ছে দুনিয়ার সর্বত্র, বানাচ্ছে মৃত্যুঞ্জয় কিংবা তার গুরুদের মতো সকল সত্য সুন্দর মঙ্গলময় সবকিছুর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসায় জ্বলতে পুড়তে থাকা উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী…  

মৃত্যুঞ্জয়ের সেই পোস্টের নিচে কমেন্টবক্সে কমেন্ট করে তানজিম সাকিব জানিয়েছে 

“তাকদীরের উপর আমার পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস আছে।
আমি তোমাকে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসি বন্ধু”

অর্থাৎ, নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক প্রোফাইলে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের ঘরে আটকে ফেলার পক্ষে স্ট্রং প্রচার প্রচারণা চালানোর মতো চরম বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটানো, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাস্যের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো, আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে অস্বীকৃতি জানানো, বিজয় দিবস পালন অনুচিত বলে প্রচারণা চালানোর মতো অসংখ্য জঘন্য ঘটনা সে ঘটিয়েছে তার বন্ধুর প্রত্যক্ষ সাহচার্যে এবং ভবিষ্যতেও সে একই কাজ চালিয়ে যাবে। 

কী ভয়াবহ চিন্তা! কি ভয়ংকর স্পর্ধা! ন্যুনতম অনুতাপ বা খারাপ লাগা বা অনুশোচনা বা দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রিপ্রেজেন্ট করা একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে তার কাজটা ভুল কি ঠিক সেটা যাচাইয়ের চেষ্টা দূরে থাক, অনুভূতিশূন্য জোম্বির মত সে একই বুলি আউড়ে যাচ্ছে যে, যেটা করেছে সে বন্ধুর সমর্থনে সেটাই করে যাবে। 
সবচেয়ে অমার্জনীয় ব্যাপারটি হচ্ছে, এতকিছুর পরেও দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক বিসিবির কর্তাব্যাক্তিদের এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনো বিবৃতি দেননি কেউই!

অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বৈষম্যবিরোধী নীতিমালায় বলা আছে, “এখানে স্পষ্টতই বৈষম্যের কোনো স্থান নেই”। এতে আরও বলা হয়েছে, “বিশ্বের অন্যতম কঠিন খেলার এই নীতি জাতি, বর্ণ, ধর্ম, বংশ, সংস্কৃতি, জাতিগত উৎস, জাতীয়তা, সেক্স এবং জেন্ডার, যৌন অভিযোজন, অক্ষমতা, বৈবাহিক অবস্থা এবং মাতৃত্বের অবস্থা নির্বিশেষে সর্বস্তরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রচার এবং উৎসাহিত করার জন্য আইসিসি এবং এর সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে। সেই সাথে এটা নিশ্চিত করে যে, খেলাধুলায় কোনো বৈষম্যের স্থান নেই।”

আইসিসির Anti-Discrimination Code for Participants অনুযায়ী তানজিম সাকিব 2.1.1 কোড অব কন্ডাক্ট ভেঙেছেন যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

2.1.1 Engaging in any conduct (whether through the use of language, gestures or otherwise) which is likely to offend, insult, humiliate, intimidate, threaten, disparage or vilify any reasonable
person in the position of a Player, Player Support Personnel, Umpire, Match Referee, Umpire Support Personnel or any other person (including a spectator) on the basis of their race,
religion, culture, colour, descent, national or ethnic origin, sex, gender, sexual orientation, disability, marital status and/or maternity status

এছাড়া আইসিসির ANTI-DISCRIMINATION POLICY FOR INTERNATIONAL CRICKET অনুযায়ী বাংলাদেশ দল আইসিসির মেম্বার হওয়াতে 6.(a) ভেংগেছে এবং সেটার শাস্তি আইসিসি থেকে বাংলাদেশ দল হিসেবেও পেতে পারে।

6. The ICC and all of its Members should:

(a) not at any time offend, insult, humiliate, intimidate, threaten, disparage, vilify or unlawfully discriminate between persons based on their race, religion, culture, colour, descent, nationality, ethnic origin, sex, gender, sexual orientation, disability, marital status and/or maternity status (‘Inappropriate Conduct’);

এমন স্পষ্ট ঘোষণার পরেও এই দুই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? অবিলম্বে দেশের পেশাজীবী নারীসহ সব নারীদের কাছে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে নিজের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জন্য মৃত্যুঞ্জয় ও সাকিবকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। 
অবিলম্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে এই দুই ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, শুধু তাদেরই না, ভবিষ্যতে এমন কিছু এড়াতে বাংলাদেশের প্রত্যেক ক্রিকেটারকে জাতিগত, ধর্মীয়, সামাজিক ইত্যাদি যেকোন বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এবং নৈতিকতা গঠনে কাউন্সেলিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

উদাহরণ দেখতে বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই,২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচের সময় জাতীয় সঙ্গীত না গেয়ে চুইংগাম চিবানোয় ভারতের সম্ভবনাময় প্রতিভাবান অলরাউন্ডার পারভেজ রসুলের চিরতরে জাতীয় দল থেকে নিষেধাজ্ঞা, বছর দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন টিম পেইনের কিছু আপত্তিকর স্ক্রিনশট ভাইরাল হওয়ায় তার অধিনায়কত্ব হারানো এবং শেষপর্যন্ত দল থেকে পার্মানেন্টলি বাদ পড়ে যাওয়া, কিশোর বয়সে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো কিছু টুইট ভাইরাল হওয়ায় গত বছর ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকা পেসার ওলি রবিনসনকে ইসিবির নিষেধাজ্ঞার এমন অজস্র উদাহরণ হাতের কাছেই আছে। 

রবিনসন প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ও দীর্ঘদিন কাউন্সেলিং শেষে পরিণত মানুষ হয়ে আবার ফিরতে পেরেছিলেন ইংল্যান্ড দলে, কিন্তু রসুল বা পেইনের মতো এমন অনেকেই আর কখনোই ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি। 

স্পোর্টস ধর্ম প্রচারের জায়গা নয়, স্পোর্টস রাজনৈতিক মতাদর্শ বা লিঙ্গ-বর্ণ-জাতিগত বৈষম্য প্রকাশেরও মাধ্যম নয়। স্পোর্টস পৃথিবীর একমাত্র প্লাটফরম যেখানে ইকুইটি এবং ইকুয়ালিটি রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। 

বিসিবিকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এমন জঘন্য উগ্র ধর্মান্ধ মানসিকতার কেউ বাংলাদেশ জাতীয় দলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক, নীতি-নৈতিকতা, ধর্ম-লিঙ্গ-জাতি নির্বিশেষে সবার প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রাখার প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

রা’আদ রহমান, গবেষক, কলামিস্ট

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। ঢাকা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী নয়।

   

About

Popular Links

x