আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর বসে চার বছর পরপর। এক সময় ক্রিকেট বিশ্বকাপ বলতে শুধু এই টুর্নামেন্টকেই বোঝানো হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি-টোয়েন্টির জন্য পৃথক বিশ্বকাপ আসায় এটির জায়গা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরগুলোর মধ্যে সময়ের ব্যবধানের পার্থক্য থাকলেও ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় চার বছর পরপরই।
ওয়ানডে ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে, পুরো আসরে যিনি সেরা খেলোয়াড় হন, তার হাতেই ওঠে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার। ওয়ানডে বিশ্বকাপ ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হলেও প্রথম চার টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হয়নি। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়ার প্রচলন শুরু। এরপর একে একে এই খেতাব উঠেছে ৮ জন খেলোয়াড়ের হাতে।
এখন পর্যন্ত যারা আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন, তারা প্রত্যেকেই সেই আসরে অন্তত সেমিফাইনাল খেলেছেন। আগের পর্বে আমারা জেনেছিলাম ১৯৯২ থেকে ২০০৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরাদের কথা। এই পর্বে আমরা জানবো ২০০৭ থেকে সর্বশেষ ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত কাদের হাতে উঠেছে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব-
২০০৭: গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)
আগের আসরেই দাপুটেভাবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আগের দুই আসরেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠেয় ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ানদের সামনে ছিল প্রথম দল হিসেবে টানা তিনবার শিরোপা ঘরে তোলার হাতছানি। আগের আসরের আধিপত্যটা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও বজায় রাখে অজিরা; আর তাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা নামের এক ঠাণ্ডা মেজাজের শিকারি।
গ্রুপপর্বে প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৬ ওভার বল করলেও এক মেডেনসহ মাত্র ১৪ রানের বিনিময়ে ম্যাকগ্রা তুলে নেন ৩ উইকেট। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে দুই উইকেট শিকার করেন এ পেসার। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে তৎকালীন সময়ে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অবশ্য ম্যাকগ্রা তেমন সুবিধা করতে পারেননি, ৯ ওভার বল করে ৬২ রানের খরচায় নিতে পেরেছিলেন মাত্র ১ উইকেট।
গ্রুপপর্বে কিছুটা অনুজ্জ্বল ম্যাকগ্রাকে সুপার সিক্সে দেখা গিয়েছিল এক ভিন্ন রূপে। একে একে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড ও সেই আসরের সবচেয়ে বড় চমক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন এই ফাস্ট বোলার। এছাড়া সুপার সিক্সের শেষ দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দুটি করে উইকেট নিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপপর্বে দুই দলের সাক্ষাতে খরুচে বোলিংয়ে নিজের ছায়া হয়ে থাকলেও শেষ চারের লড়াইয়ে প্রোটিয়াদের সামনে ম্যাকগ্রা রীতিমতো হাতা গুটিয়ে নামলেন। ৮ ওভার বল করে ১৮ রানের বিনিময়ে এক মেডেনের সঙ্গে ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকানদের মিডল অর্ডার ভেঙে গুড়িয়ে দেন এই পেসার।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য ম্যাকগ্রার বেশি কিছু করতে হয়নি। ৭ ওভার বল করে ৩১ রান নিতে পেরেছিলেন মাত্র একটি উইকেট। কিন্তু এক শন টেইট ছাড়া ম্যাকগ্রার পাশাপাশি বাকি সেদিন হাত ঘুরানো সব বোলারই উইকেটের দেখা পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে বেগ পেতে হয়নি।
ক্যারিয়ারে চারটি বিশ্বকাপ খেললেও শেষ বিশ্বকাপেই শুধুমাত্র টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির আসনে বসেন ম্যাকগ্রা। পুরো আসরে ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪.৪১ ইকোনমি রেটে ২৬ উইকেট নেন এই অজি পেসার।
সেই আসরে কোনো ম্যাচে চার/পাঁচ উইকেট না নিলেও ন্যুনতম ছয়টি ম্যাচে তিনটি করে উইকেট নেন ম্যাকগ্রা, সেই সঙ্গে তিনটি ম্যাচে হন ম্যাচসেরা। অনুমিতভাবেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন এই অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুরোদস্তুর কোনো বোলারের হাতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে।
২০১১: যুবরাজ সিং (ভারত)
১৫ বছর পর ২০১১ সালে উপমহাদেশের মাটিতে বসে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। স্বাভাবিকভাবেই হট ফেবারিটের তালিকায় ভারত ছিল ওপরের দিকেই। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আগুন ঝরানো ভারতীয় দলে তখন পারফর্মারের অভাব নেই। তবে এত পারফর্মারদের ভিড়েও পুরো টুর্নামেন্টে নিজেকে আলাদাভাবে চেনান যুবরাজ সিং।
উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাট হাতে যেমন ক্রিজে নামার সুযোগ হয়নি, তেমনি বল হাতেও ছিলেন উইকেটবিহীন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ বাউন্ডারিতে ৫০ বলে ৫৮ রান করলেও বল হাতে এবারও কোনো উইকেট নিতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচে তেমন ছন্দে না থাকলেও পরের দুই ম্যাচেই স্বরূপে ফেরেন যুবরাজ।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে ১০ ওভারে মাত্র ৩১ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট নেন যুবরাজ। পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৭৫ বলে অপরাজিত থাকেন ৫০ রানে। আইরিশদের বিপক্ষে ওই ম্যাচেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার এবং ৫০ রান করার কীর্তি গড়েন এই ভারতীয় অলরাউন্ডার।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও দেখা যায় যুবরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য। বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে তিনি করেন অপরাজিত ৫১ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরের ম্যাচে অবশ্য বিবর্ণ ছিলেন যুবরাজ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ১১৩ রানের ইনিংস খেলার সঙ্গে ক্যারিবিয়ানদের দুই উইকেট তুলে নেন এই ভারতীয়।
কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া, যারা আগের তিন আসরের শিরোপা জয়ী। ঘরের মাঠে নামলেও পরাক্রমশালী অজিদের বিপক্ষে জেতাটা বড় চ্যালেঞ্জই ছিল। যুবরাজের কল্যাণের সেই চ্যালেঞ্জ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। বোলিংয়ে তুলে নিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিন আর অলরাউন্ডার মাইকেল ক্লার্কের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। রান তাড়া করতে নেমে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়া ভারতকে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস খেলে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন যুবরাজ।
শেষ চারে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হলেও বল হাতে সেট হয়ে যাওয়া আসাদ শফিক এবং অভিজ্ঞ ইউনিস খানকে ফিরিয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজ। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও বল হাতে বেশ কার্যকর ছিলেন যুবরাজ। ১০ ওভার বল করে ৪৯ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছিলেন অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা এবং থিলান সামারাবিরাকে। ব্যাটিংয়ে নেমে ২১ রান করে অধিনায়ক ধোনির সঙ্গে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করার আনুষ্ঠানিকতা সারেন যুবরাজ।
পুরো আসরে ব্যাটিংয়ে একটি সেঞ্চুরি ও চারটি ফিফটির মাধ্যমে ৯০.৫০ গড় ও ৮৬.১৯ স্ট্রাইক রেটে যুবরাজ করেন ৩৬২ রান। অন্যদিকে, বোলিংয়ে ৫.০২ ইকোনমি রেটে তুলে নেন প্রতিপক্ষের ১৫টি উইকেট। পুরো টুর্নামেন্টে কখনো ব্যাট হাতে আবার কখনো বল হাতে জ্বলে উঠে চারবার ম্যাচসেরা হয়েছেন যুবরাজ। ফলে অনুমিতভাবেই সেই আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন এই ভারতীয় অলরাউন্ডার।
২০১৫: মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
দীর্ঘ ২৩ বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গড়ায় আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আগের আসরেই শিরোপা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়ানরা। অজিদের জন্য তাই সেই আসরটি ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের মিশন। সেখানে বল হাতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মিচেল স্টার্কই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় অস্ত্র।
গ্রুপপর্বের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড, নবাগত আফগানিস্তান এবং আগের আসরের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুইটি করে উইকেট নেন স্টার্ক। তবে গ্রুপপর্বে অস্ট্রেলিয়ান পেসারের খুনে মেজাজটা দেখা যায় স্কটল্যান্ড ও সেই আসরের আরেক সহ-আয়োজক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কিউইদের বিপক্ষে লো স্কোরিং সেই ম্যাচে ৯ ওভারে মাত্র ২৮ রানের খরচায় ৬ উইকেট নেন স্টার্ক। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে স্কটিশদের বিপক্ষে মাত্র ৪.৪ ওভার বল করেই ১৪ রান দিয়ে এক মেডেনসহ ৪ উইকেট নেন।
গ্রুপপর্বের ধ্বংসাত্মক ফর্মটা নকআউট পর্বেও টেনে নিয়ে যান স্টার্ক। কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ ওভার বল করে এক মেডেনের মাধ্যমে ৪০ রান দিয়ে এই অজি ফাস্ট বোলার তুলে নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। সেমিফাইনালে তৎকালীন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষেও দুই উইকেট নিয়েছিলেন, তবে এবার ৮.৫ ওভার বল করে মাত্র ২৮ রানের খরচায়।
সেই আসরের ফাইনালে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল দুই আয়োজক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ট্রান্স তাসমান সাগরের প্রতিবেশীদের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে ৬ উইকেট তুলে নিলেও স্টার্ককে থাকতে হয়েছিল পরাজিত দল। ফাইনালে অবশ্য এই অস্ট্রেলিয়ান পেসার শিকার করেছিলেন দুই উইকেট; তবে এর মধ্যে প্রথম ওভারেই সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন ব্ল্যাক ক্যাপস অধিনায়ক ও সেমিফাইনালে মারমুখী ব্যাটিং করা ম্যাককালামকে। বোলিংয়ে তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী, ৮ ওভার বল করে দিয়েছিলেন মাত্র ২০ রান।
২০১৫ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে বল হাতে নিয়ে ১০.১৮ বোলিং গড়, ১৭.৪০ স্ট্রাইক রেট ও ৩.৫০ ইকোনমি রেটে ২২ উইকেট শিকার করেন স্টার্ক। নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্টও সমান সংখ্যক উইকেট নিলেও স্টার্ক ম্যাচ খেলেছিলেন একটি কম। পাশাপাশি অন্য ক্রাইটেরিয়াতেও ছিলেন এগিয়ে। ফলে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন এই অজি ফাস্ট বোলারই।
রেকর্ডের পাতায় ওই আসরের স্টার্ক ও ২০০৭ সালের ম্যাকগ্রার মধ্যে অনেকাংশেই সাদৃশ্য ছিল। সেই আসরে ম্যাকগ্রার পর দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান ও টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে একই আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন স্টার্ক। কিংবদন্তি ম্যাকগ্রার মতোই আসরের সবগুলো ম্যাচেই উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন স্টার্ক।
২০১৯: কেইন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)
লিগ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ম্যাচে উইলিয়ামসনকে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। বাংলাদেশের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ফিফটি করা রস টেলর ম্যাচসেরা হলেও তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাকে সঙ্গ দেওয়া উইলিয়ামনের ৪০ রানের স্থিতধী ইনিংসটির ভূমিকাও কম ছিল না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই অবশ্য ওই আসরে নিজের প্রথম অর্ধশতক তুলে নিয়ে ৭৯ রান করেন এই কিউই ব্যাটার। ভারতের বিরুদ্ধে ব্ল্যাক ক্যাপসদের পরের ম্যাচটি অবশ্য বৃষ্টিতে ভেসে যায়।
২০১৯ বিশ্বকাপে লিগ পর্বের পঞ্চম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই আসরে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেন উইলিয়ামসন। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংস খেলে ওই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও হন তিনি। উইলিয়ামসন শতক হাঁকান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্ল্যাক ক্যাপসদের পরের ম্যাচেও। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ৫ রানের জয় পাওয়া ম্যাচে ১৫৪ বলে ১৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ১৪৮ রানের ইনিংস খেলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচসেরা হন নিউজিল্যান্ডের এই ডানহাতি ব্যাটার।
লিগ পর্বের বাকি অংশে অবশ্য উইলিয়ামসনের ব্যাট হাসেনি। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া এবং স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের তিন ম্যাচে তিনি যথাক্রমে ৪১, ৪০ ও ২৭ রান করেন। কিউইরাও এই তিন ম্যাচে পরাজিত হয়। লিগপর্ব শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল পাকিস্তানের সমান ১১ পয়েন্ট। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় সেমিফাইনালের টিকেট পেয়েছিল কিউইরাই। মূলত প্রথম ছয় ম্যাচে পাওয়া পাঁচ জয়ের সুবাদেই শেষ চারে উঠে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। বৃষ্টির বাগড়ায় রিজার্ভড ডেতে গড়ানো সেই ম্যাচে ভারতীয়দের বিপক্ষে ৬৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছিলেন উইলিয়ামসন। ফাইনালে যদিও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বলার মতো কিছু করতে পারেননি কিউই অধিনায়ক। মাত্র ৩০ রান করেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। পরবর্তীতে নির্ধারিত ৫০ ওভার ও সুপার ওভারে টাইয়ের পর বাউন্ডারির হিসাবে এক বেদনাদায়ক ট্র্যাজিক পরাজয় মেনে নিতে হয় ব্ল্যাক ক্যাপসদের। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয় উইলিয়ামসনকে।
পুরো আসরে ১০ ম্যাচের মধ্যে ৯ ইনিংসে ব্যাট হাতে দুটি করে সেঞ্চুরি ও অর্ধশতকের মাধ্যমে ৮২.৫৭ গড়ে ৫৭৮ রান করে টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন উইলিয়ামসন। শুধু তাই না, ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনেকে পেছনে বিশ্বকাপ ইতিহাসে টুর্নামেন্টের এক আসরে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড গড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার। তবে কেবলমাত্র পরিসংখ্যানের বিচারে সেই আসরে উইলিয়ামসনের প্রভাব পুরোপুরি বোঝা যাবে না।
পুরো টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ব্যর্থই ছিল বলা যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বাদ ব্যাটিংয়ে নেমে কিউইদের উদ্বোধনী জুটি তেমন ভালো শুরু এনে দিতে পারেনি। অনেক ম্যাচেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার পর প্রতিরোধ গড়ে ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেন উইলিয়ামসন। চাপের মুখে দাঁড়িয়ে ধুঁকতে থাকা দলের ব্যাটিং প্রায় একা হাতেই সামলেচেন এই ডানহাতি ব্যাটার। সেই আসরে নিউজিল্যান্ডই ছিল একমাত্র দল, যারা ব্যাটিংয়ে ৩০০ রানের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। তবে অল্প রানের পুঁজি নিয়েও উইলিয়ামসনের চৌকস অধিনায়কত্বে প্রতিপক্ষকে বেঁধে ফেলে অনেক ম্যাচই অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করে কিউইরা। সব মিলিয়ে দলের ব্যাটিং সামলে এবং যোগ্য নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডকে পুরো আসরে উজ্জীবিত করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার বগলদাবা করেন উইলিয়ামসন।