Tuesday, April 22, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

২০০৩ বিশ্বকাপে আন্ডারডগ কেনিয়ার স্বপ্নযাত্রা

আফ্রিকা মহাদেশে আয়োজিত ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া এমন এক কীর্তি গড়েছিল, যা আইসিসির আর কোনো সহযোগী সদস্যই করতে পারেনি

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৪ পিএম

ক্রিকেটকে বলা হয় “গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা”। তবে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাস দেখলে হয়ত অনেকেই কথাটির সঙ্গে একমত হবেন না। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রায় প্রতি আসরেই কম-বেশি অঘটন ঘটে থাকে। কালেভদ্রে তুলনামূলক দুর্বল দলগুলো পরাশক্তিদের হারিয়ে দিলেও খুব কম সময়ই পুরো আসরে বেশিদূর যেতে পেরেছে। উদাহরণ হিসেবে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক।

১৯৮৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড আর ১৯৯৯ সালে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। তবে জিম্বাবুয়েনরা শুধুমাত্র ১৯৯৯ আর ২০০৩ সালের আসরেই গ্রুপপর্ব পেরোতে পেরিয়েছিল।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের অঘটনঘটনপটীয়সী হিসেবে আয়ারল্যান্ড দলের আলাদা সুনাম রয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান, ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড, ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়েছে আইরিশরা। কিন্তু নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপ (২০০৭) ব্যতিত তারা গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেনি আয়ারল্যান্ড।

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বশেষ ছয় আসরেই খেলা বাংলাদেশের ঝুলিতেও পাকিস্তান (১৯৯৯), ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা (২০০৭), ইংল্যান্ড (২০১১ ও ২০১৫), ওয়েস্ট ইন্ডিজের (২০১৯) মতো ক্রিকেটের পরাশক্তি দলগুলোর বিপক্ষে জয় আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আসরেই সেমিফাইনালে নাম লেখাতে পারেনি টাইগাররা। ২০০৭ সালে সুপার এইট এবং ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাই এখন পর্যন্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য।

কেনিয়া-২০০৩-বিশ্বকাপ-Kenya-2003-World-Cup

মোদ্দাকথা হলো ওয়ানডে বিশ্বকাপে ক্ষণিকের আবির্ভাবে উল্কা-ধুমকেতুর মতো আভা ছড়ানো সম্ভব, কিন্তু চন্দ্র-সূর্যের মতো ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে যাওয়া আন্ডারডগদের সংখ্যা অতি নগণ্য। তালিকায় দারুণ ব্যতিক্রম কেনিয়া। ১৯৯৬ সালে নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপেই দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল আফ্রিকান দেশটি। তবে সেবার গ্রুপপর্বের বৈতরণী পেরোতে পারেনি কেনিয়ানরা।

২০০৩ বিশ্বকাপে রীতিমতো বিস্ময়ের সীমরেখা পার করে ফেলে কেনিয়া। আফ্রিকা মহাদেশে আয়োজিত প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপের সেই আসরে অন্যতম সহআয়োজক ছিল তারা। সেবার একের পর এক বাধা-প্রতিকূলতা ও পরাশক্তিদের চোখরাঙানিকে অতিক্রম করে শেষ চারে পৌঁছে গিয়েছিল কেনিয়ানরা। আইসিসির পূর্ণ সদস্য না হওয়া সহযোগী দেশগুলোর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার একমাত্র নজিরও এটি।

কেনিয়া-২০০৩-বিশ্বকাপ-বাংলাদেশ-Kenya-defeated-Bangladesh-2003-WC

২০০৩ বিশ্বকাপের পুলপর্বে কেনিয়ার জায়গা হয়েছিল এ গ্রুপে। সেখানে তাদের সঙ্গী হিসেবে ছিল মূল আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ ও কানাডা। সেই আসরে কেনিয়ার শুরুটা অবশ্য হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পচেফস্ট্রুমে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ উইকেটের শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল কেনিয়ানরা।

পুলপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নবাগত কানাডার মুখোমুখি হয় কেনিয়া। শক্তিমত্তা আর অভিজ্ঞতায় কেনিয়ানরা এগিয়ে ছিল। এদিকে, নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে হারানোয় কানাডাও ছিল বেশ উজ্জীবিত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কানাডিয়ানরা পারেনি। টমাস ওডয়োর চার উইকেটের বদৌলতে ১৯৭ রানে অলআউট হয় কানাডা। জবাবে রবি শাহর ৬১ এবং অধিনায়ক স্টিভ টিকোলোর ৪১ রানের ওপর ভর করে চার উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে কেনিয়া।

নিউজিল্যান্ড-২০০৩-বিশ্বকাপ-NZ-2003-WC 

আট বছর পর বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদ পাওয়ার পর নাইরোবিতে সেই আসরে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করে কেনিয়া। এটুকু পড়ে কেউ যদি ভাবেন যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি ঘরের মাটিতে ক্রিকেটীয় নৈপুণ্যে ব্ল্যাক ক্যাপদের হারিয়েছে, তাহলে ভুল ভাবছেন। পেছনের কথা হলো  নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে খেলতে নাইরোবি যেতে অস্বীকৃতি জানায় কিউইরা। এতে টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী ওয়াকওভারের কারণে মাঠে না নেমেই জয়ের জন্য পূর্ণ পয়েন্ট পেয়ে যায় কেনিয়া।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কেনিয়ার এই জয়ের সময়ও হয়তো ক্রিকেটপ্রেমীরা ভাবতে পারেনি, তারা কী এক অভাবনীয় যাত্রার সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। বর্তমানে জয়ের জন্য দুই পয়েন্ট বরাদ্দ থাকলেও সেই আসরে প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল ৪ পয়েন্ট। তবে ওয়াকওভারে কিউই বধের মাধ্যমে কেনিয়ার সামনে গ্রুপপর্ব পেরোনোর রাস্তা খুলে যায়। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরের তিন ম্যাচের মধ্যে যেকোনো দুটিতে জেতার মাধ্যমেই সুপার সিক্সে চলে যাওয়ার সুযোগ আসে কেনিয়ার সামনে।

কেনিয়া-২০০৩-বিশ্বকাপ-শ্রীলঙ্কা-Kenya-celebration-Sri-Lanka-2003-WC

কেনিয়ার প্রয়োজনীয় সেই দুই জয়ের প্রথমটি এসে যায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচেই। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওয়াকওভারে জিতলেও লঙ্কানদের ঠিকই মাঠের ক্রিকেটে পরাজিত করে আফ্রিকান দেশটি। নাইরোবিতে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে কেনেডি ওটিয়েনোর ৬০ এবং বাকি ব্যাটারদের ছোট ছোট ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২১০ রান সংগ্রহ করে কেনিয়া। জবাবে মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট নেওয়া লেগ স্পিনার কলিন্স ওবুইয়ার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৩ রানের জয় তুলে নিয়ে সুপার সিক্সে এক পা দিয়ে ফেলে কেনিয়া। পরের ম্যাচে কেনিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল সেই আসরে ছন্দহীন বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২১৭ রান সংগ্রহ করে কেনিয়া। জবাবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। এই ম্যাচে মূলত মরিস ওদুম্বের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে ৪৬ বলে ৫২ রান করার পর বল হাতে ৩৮ রানের খরচায় চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ওদুম্বে।

মরিস-ওদুম্বে-Maurice-Odumbe

বাংলাদেশকে ৩২ রানে পরাজিত করার মাধ্যমে সুপার সিক্সের টিকেট পেয়ে যায় কেনিয়া। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৪২ রানে পরাজিত হওয়ার পরও তাই কেনিয়ার কোনো সমস্যা হয়নি। সুপার সিক্সে কেনিয়ার অপর পাঁচ সঙ্গী ছিল তৎকালীন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আরেক সহআয়োজক জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা আর নিউজিল্যান্ড ছিল পুলপর্বে কেনিয়ানদের গ্রুপসঙ্গী। ফলে সুপার সিক্সে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জিম্বাবুয়ের মোকাবিলা করতে হতো কেনিয়াকে।

পুলপর্বের জয়গুলোর কারণে সুপার সিক্সের শুরু থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল কেনিয়া; পরে সেটিই তাদের সেমিফাইনালে উঠতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। সেই ব্যাপারে পরে আসা যাবে। পুলপর্বে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডকে হারালেও সুপার সিক্সে বড় দলগুলোর বিপক্ষে তেমন সুবিধা করতে পারেনি কেনিয়ানরা। সুপার সিক্সে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে ছয় উইকেটে পরাজিত হয় কেনিয়া।

সুপার সিক্সে কেনিয়ার পরবর্তী প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ওই দুই সহআয়োজকদের লড়াইয়ে ফেবারিট ছিল জিম্বাবুইয়ানরাই। তাছাড়া, এর আগের মুখোমুখি ১২ লড়াইয়েও কেনিয়ানরা ছিল জয়হীন। কিন্তু শক্তিমত্তার বিচারে এগিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে সেদিন কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি। ব্লুমফন্টেইনে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কেনিয়ার বোলিং তোপে মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ানরা। পরে কেনিয়া হেসেখেলেই ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে পাঁচ উইকেটে হেরে গেলেও ঠিকই শেষ চারে জায়গা করে নেয় কেনিয়ানরা।

২০০৩-বিশ্বকাপ-কেনিয়া-জিম্বাবুয়ে-Kenya-vs-Zimbabwe-2003-WC

শেষ চারে ভারতের মুখোমুখি হয় কেনিয়া। সুপার সিক্সের মতো সেমিফাইনালেও ভারতীয়দের কাছে পাত্তা পায়নি আফ্রিকান দেশটি। অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির শতক (অপরাজিত ১১১) আর সেই আসরের সেরা খেলোয়াড় শচীন টেন্ডুলকারের ৮৩ রানের সুবাদে দারুণ এক  নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে টিকোলোর (৫৬) একাকী নিঃসঙ্গ লড়াইয়ের পর ১৭৯ রানে থেমে যায় কেনিয়ানরা। ভারতের কাছে ৯১ রানের এই পরাজয়ের মাধ্যমে কেনিয়ার সেই স্বপ্নযাত্রা শেষ হয়।

তবে ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার অবিশ্বাস্য স্বপ্নযাত্রায় ভাগ্যও বড় একটা ভূমিকা রেখেছিল। পুলপর্বে নিজে গ্রুপের পয়েন্ট তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে থাকলেও এই দুই দলের কাছেই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল কেনিয়ানরা। পুল পর্বে ওয়াকওভারের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে
জয়টা না পেলে তো কেনিয়ার সুপার সিক্সে ওঠার রাস্তাই উন্মুক্ত হতো না। আবার বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা আর উইন্ডিজের একটি ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে না হলেও হয়তো কেনিয়া গ্রুপপর্ব পার হতো না। কারণ সুপার সিক্সে ওঠা কেনিয়া ও নিউজল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১৬ পয়েন্ট। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ছিল ১৪। কেনিয়ার তুলনায় রানরেটেও এগিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা আর উইন্ডিজ।

কেনিয়া-২০০৩-বিশ্বকাপ-সেমিফাইনাল-Kenya-2003-WC-Semifinal

পুলপর্বের জয়গুলোর কারণে সুপার সিক্সের শুরু থেকেই কেনিয়ার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা বলেছিলাম। সেই আসরে পুলপর্বের ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সুপারে সিক্স শুরু হওয়ার আগেই প্রতিটি দলের ঝুলিতে বেশ কিছু পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফরম্যাট অনুযায়ী, নিজ গ্রুপ থেকে যে অপর যে দুই দল সুপার সিক্সে নাম লিখিয়েছে, তাদের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে জিতলে যোগ হতো চার পয়েন্ট। অন্যদিকে সুপার সিক্সের টিকেট পায়নি, গ্রুপপর্বে এমন দলের বিপক্ষে জয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র এক পয়েন্ট।

এক্ষেত্রে এ গ্রুপ থেকে সুপার সিক্সে পা রাখা শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড দুই দলের বিপক্ষেই পুলপর্বে জয়ের দেখা পেয়েছিল কেনিয়া। এই দুই জয়ের বদৌলতে কেনিয়ানদের ঝুলিতে যোগ হয় ৮ পয়েন্ট। এছাড়া, বাংলাদেশ ও কানাডাকে হারানোর মাধ্যমে আরও দুই পয়েন্ট পায় আফ্রিকান দেশটি। সব মিলিয়ে সুপার সিক্সের আগেই কেনিয়ার সংগ্রহ ছিল ১০ পয়েন্ট। অন্যদিকে, গ্রুপপর্বে কেনিয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা সুপার সিক্স শুরু করে সাড়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে। আর কেনিয়ার সমান পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপপর্ব পেরোনো নিউজিল্যান্ড সুপার সিক্স শুরু করে মাত্র চার পয়েন্ট নিয়ে।

কেনিয়া-২০০৩-বিশ্বকাপ-শ্রীলঙ্কা-Kenya-beats-SL-2003-WC

শেষ পর্যন্ত পুলপর্ব থেকে অর্জিত ১০ পয়েন্টই কেনিয়ার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। সুপার সিক্সে ওই আসরের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে পরাজিত হওয়ার বিপরীতে শুধুমাত্র জিম্বাবুয়েকে হারাতে সমর্থ হয় কেনিয়ানরা। সুপার সিক্স শেষে তৃতীয় অবস্থানে থাকা কেনিয়ার সংগ্রহ ছিল ১৪ পয়েন্ট, যার মধ্যে ১০ পয়েন্টই যোগ হয়েছিল পুলপর্ব থেকে। ১১.৫ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা ছিল তাদের পরেই। অন্যদিকে, ৮ পয়েন্ট নিয়ে ছিটকে যায় পঞ্চম স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ড। পুলপর্বের ওই ১০ পয়েন্টই যে কেনিয়াকে সেমিফাইনালে তুলে দিয়েছিল, সেই কথা তাই জোর দিয়ে বলাই যায়।

২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সেমিফাইনালে ওঠাকে ফ্লুক হিসেবে ধরা হয় ক্রিকেটে তাদের পরবর্তী অবস্থার বিচারে। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর কেনিয়ার ক্রিকেট শুধু পেছনেই হেঁটেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বশেষ দুই আসরের মূলপর্বেও জায়গা করে নিতে পারেনি কেনিয়ানরা। দুর্নীতি, পরিকল্পনার অভাব, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা, সহযোগী দেশগুলোর প্রতি আইসিসির মনোভাব, মানসম্পন্ন ক্রিকেটার উঠে না আসা- সব মিলিয়ে কেনিয়ার ক্রিকেটই এখন বিলুপ্তপ্রায়। তবে ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সেমিফাইনালে যাওয়ার কীর্তি ঠিকই টুর্নামেন্ট ইতিহাসে যেমন অসামান্য একটি অবস্থানে রয়েছে, তেমনি সহযোগী দেশগুলোর জন্যও কাজ করছে বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে।

   

About

Popular Links

x