ছাত্রজীবন থেকেই দেশসেরা সাঁতারু হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য (৭০) একাধিক জাতীয় রেকর্ডের অধিকারী। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার রেকর্ড গড়ার নেশাও। ৬৭ বছর বয়সে ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতার কেটে রেকর্ড গড়েন তিনি।
এখন তার বয়স ৭০ বছর। এই বয়সে নতুন রেকর্ডের লক্ষ্য স্থির করেছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। বর্তমানে সাঁতার কেটে সবেচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রমের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারী স্প্যানিশ নাগরিক পাবলো ফার্নান্দেজের দখলে। ৭০ বছর বয়সে ২৮১ কিলোমিটার সাঁতরে রেকর্ডটি নিজের করে নিতে চান ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্দেশ্যে সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টায় সিলেট নগরীর সুরমা কিনব্রিজ পয়েন্ট সংলগ্ন চাঁদনিঘাট থেকে সাঁতার শুরু করেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ২৮১ কিলোমিটার সাঁতরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফেরিঘাটে পৌঁছাবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এ যাত্রায় ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ- এই চার জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণ অতিক্রম করবেন। এতে প্রায় ৭০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৯-২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির ফ্লোরিডায় টানা ২৫০ কিলোমিটার সাঁতরে ম্যারাথন সাঁতারের ১৫ বছরের পুরোনো রেকর্ডটিকে ভেঙে নিজের করে নেন স্প্যানিশ সাঁতারু পাবলো ফার্নান্দেজ।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যর বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। ১৯৫২ সালের ২৩ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
সাঁতারু হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলেন, “আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ২০১২ সালের মে মাসে অবসর নিলেও এখনও পরামর্শক (কনসালটেন্ট) হিসেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অধীনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কাজ করছি। ছাত্রজীবন থেকেই সাঁতার আমার নেশা। আমি একজন অবিরাম শৌখিন সাঁতারু। ১৯৭০ সাল থেকেই আমি দূরপাল্লার বা অবিরাম সাঁতারের সঙ্গে জড়িত। সেবার নিজের এলাকা নেত্রকোনার মদনে টানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলাম। তারপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধে যাই।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭৩ সালে সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে টানা ৮২ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলাম। এ ছাড়া সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন পুকুর, ধোপাদিঘী, সুনামগঞ্জ এবং ছাতকেও দীর্ঘ সময় অবিরাম সাঁতার কেটেছি। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট এবং ১৯৭৬ সালে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড করি। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড করায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে রুপার নৌকা দিয়ে সম্মানিত করেন। ২০১৮ সালে ১৮৫ কিলোমিটার দূরপাল্লার সাঁতার কাটি, যা ছিল আরেকটি স্থানীয় রেকর্ড।”
সিলেট জেলা নৌ-পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির আহমদ জানান, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নৌ-পুলিশসহ সিভিল সার্জনের একাধিক টিম ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের সঙ্গে রয়েছেন। পানিতে অবস্থানকালে তার যেন শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না হয়, আর হলেও যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করবে।