সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ড. মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ ড. মো. ইসমাইল হোসেনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘শপথবাক্য পাঠ করানো’ নিয়ে বিতকের্র সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়েছে - এটি মূলত ‘মতবিনিময়’ অনুষ্ঠান ছিল।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শাবির কনফারেন্স রুমে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ শপথবাক্য পাঠ করছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বাক্যগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা শাবি শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
শাবি’র একাধিক শিক্ষার্থী সংবাদমাধ্যমকে জানান, সম্মেলন কক্ষে দাঁড়িয়ে নতুন প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ওই শপথবাক্য পড়তে দেখা যায়।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সালেহ মো. নাসিমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী।
শপথবাক্য পাঠের সময় বলতে শোনা যায়, “মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া যে আমরা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি (সহ-উপাচার্য) ও ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ শে জুলাইয়ের সব শহীদদের সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিকনির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকব। দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকব। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎকাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।”
এদিকে, ওই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
শুক্রবার সকালে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। শাবিপ্রবির সমন্বয়ক দেলোয়ার হোসেন শিশির প্রেরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘এটি আনুষ্ঠানিক কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। নতুন প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় ছিল। মতবিনিময়ে শহিদদের আত্মত্যাগ এবং জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের কাছে কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিষয় উঠে আসে। যে ভিডিওটা সামনে এসেছে এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ছিল।”
আমাদের বাক্যগুলো ছিল, “জুলাই বিপ্লবে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা, আহতদের সুস্থতা কামনা। জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ও আদর্শ ধারণ করে ক্যাম্পাসকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি মুক্ত রেখে শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাবিপ্রবি যেন দেশ ও জাতি এবং বিশ্বাবাসীকে আলোর পথ দেখাতে সক্ষম হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিজ্ঞা। আমাদের এই উদ্দেশ্যকে আমরা আরও সুন্দর এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে মূলত এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শাবি শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব এ প্রতিবেদককে জানান, এ বিষয়ে তারা দুইটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে দিয়েছেন। এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শাবি’র উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, মূলত এটা ছিল তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠান। এ কারণে তারা দাঁড়িয়ে ছাত্রদের সাথে কথা বলেন। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শাবির ট্রেজারারকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের নতুন উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন।