একটি শিশুর জন্মের পর থেকে তার শারীরিক গঠন দেখে সমাজ তাকে লৈঙ্গিক পরিচয় (পুরুষ অথবা নারী)। তারপর সে হিসেবেই তাকে লালন-পালন করা হয়। যেমন ছেলে বলে ব্যাট-বল, পিস্তল, সাইকেল, প্যান্ট, শার্ট এগুলো কিনে দেয়। মেয়ে হলে হাড়ি-পাতিল, পুতুল কিনে দেয়।
এরপর বড় হতে শুরু করলে ছেলেদের শেখানো হয় বাইরের কাজ। বিপরীত দিকে মেয়েরা ঘরের কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে।
একটি ছেলে বা মেয়ে কী পোশাক পরবে, কেমন ধরনের কাজ করবে তার প্রধান নির্ধারক সমাজ। এ বিষয়টিকে বলা হয় “জেন্ডার রোল”। আর সেই মানুষটি নিজেকে যে লিঙ্গের বলে ভাবে তা হলো তার “জেন্ডার আইডেন্টিটি”। কিছু কিছু সমাজে ছেলেরা ঘরে কাজ করে আর মেয়েরা বাইরের কাজ সামাল দেয়। সেটি সে সমাজের নীতি। সে সমাজের জেন্ডার রোল। এই জেন্ডার রোল স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন হতে পারে।
কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, সমাজ যাকে ছেলে কিংবা মেয়ে হিসেবে আখ্যায়িত করে সেই মানুষটি নিজেকে কোন লিঙ্গের বলে ভাবে? আপনি কি জানেন এই জেন্ডার আইডেন্টিটিও মানুষভেদে ভিন্ন হতে পারে?
শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও এমন মানুষও আছেন সমাজ যাদের বাহ্যিক গঠন দেখে ছেলে অথবা মেয়ে হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তারা নিজেকে ঠিক উল্টোটা ভাবেন।
ধরুন, কোনো ব্যক্তিকে আপনি “ছেলে” বলছেন, কিন্তু তিনি নিজেকে মেয়ে হিসেবে ভাবেন। এতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পৃথিবীজুড়ে এ রকম মানুষের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। এই বিষয়টিকে বলা হয় জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া।
আপনার কি মনে হয়, এই জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া মানসিক অথবা শারীরিক রোগ?
২০১৩ সালের আগে এই জেন্ডার ডিস্ফোরিয়াকে “মানসিক রোগ” বলা হতো। কিন্তু গবেষকেরা অনেক গবেষণার পর ২০১৩ সালে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, এটি কোনো মানসিক বা শারীরিক রোগ নয়।
আরও পড়ুন: প্রেমের কার্যকারণ
বাহ্যিক গঠনের ভিত্তিতে পুরুষ হিসেবে পরিচিত যে ব্যক্তি নিজেকে নারী ভাবতে ভালোবাসেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ছেলে হিসেবে চলতে বাধ্য করাটা তার জন্য তীব্র মানসিক যন্ত্রণার। দিনে দিনে এই যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। সমাজ ও পরিবারের ভয়ে নিজেকে দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করলেও প্রতিনিয়ত তাকে লড়তে হয় নিজের সঙ্গে।
জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া কোনো মানসিক রোগ না হলেও সামাজিক বাস্তবতায় কারণে এ ধরনের মানুষ মানসিক রোগে ভুগতে পারেন। দেখা দিতে পারে বিষণ্নতা, অ্যাংজাইটি, ইটিং ডিসর্ডার, সোসাল উইথড্রলসহ বিভিন্ন অসুখ।
এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেকে।
এর কারণ, সেই মানুষটি মনে-প্রাণে নিজেকে “মেয়ে” ভাবলেও আটকা পড়ে আছেন একজন ছেলের শরীরে। অথবা তিনি নিজেকে ছেলে ভাবলেও আটকা পড়ে আছেন মেয়ের শরীরে।
একজন জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া-এর মানুষ তার মনের কষ্টটা ঠিক এভাবেই বলেন, “আমার মনে হয় আমি আটকে আছি ভুল শরীরে। বিষয়টি খুব পীড়াদায়ক।”
ডা. ফাতেমা জোহরা জ্যোতি, সহকারী সার্জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কোভিড ১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল।
রেসিডেন্ট (চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। ঢাকা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী নয়।