চিকিৎসার জন্য গত ১২ মে ভারতে যান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এর দুই দিন পর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে বুধবার সকালে কলকাতা পুলিশ তার মৃত্যুর কথা জানায়। তবে তিনি কবে, কীভাবে, কোথায় মারা যান সে বিষয়ে কলকাতা পুলিশ বা বাংলাদেশের কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
প্রথমে জানা যায়, নিউটাউন এলাকার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে কলকাতায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য দেননি।
এমপি আনোয়ারুলের মরদেহ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে তিনি নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন আবাসনের যে ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন সেখানে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতে ঢুকে প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন এমপি আনার। কিন্তু দু’দিন পর সেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান তিনি। গত ১৪ মে থেকেই আর আনোয়ারুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। আনোয়ারুল বরাহনগরে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন তিনি গত ১৮ মে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
বুধবার নিউটাউন থানার পুলিশ ফ্ল্যাটটিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট, রক্তের দাগের মতো নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দল। অস্থায়ী ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয় ফ্ল্যাটটি। সেখানে প্রবেশ-প্রস্থানেও কড়াকড়ি আরোপ করে কলকাতা পুলিশ।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও জানিয়েছেন, এমপি আনোয়ারুলের বিষয়ে ভারতীয় পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
রহস্যময় মেসেজ
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময় বলছে, ১২মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিম বরাহনগরে যে বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তার নাম গোপাল বিশ্বাস। তার বাড়ি থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য পরদিন বের হন তিনি। এরপরে আর ফিরে না এলে ১৮ মে বরাহনগর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে বিস্তারিত তুলে ধরেন গোপাল বিশ্বাস।
ডায়েরিতে লেখা হয়, ১৩ মে দুপুর ১টা ৪০মিনিটের দিকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাইরে যান আনোয়ারুল।
দুপুরে যাওয়ার সময় আনোয়ারুল বলে যান, সন্ধ্যায় ফিরবেন। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় ফেরেননি। পরিবর্তে তার ফোন থেকে গোপালের হোয়াটস্অ্যাপে আসা মেসেজে বলা হয়, “বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করব। তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।”
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট ইউনিটের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে তারা প্রথমে এমপি আনোয়ারুল আজীমকে বহনকারী ক্যাবচালককে আটক করেন।
সেই ক্যাবচালক তাদের জানিয়েছেন, আনোয়ারুলকে তার গাড়িতে তোলার পর আরও তিনজন গাড়িতে ওঠেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী।
চারজন কলকাতা নিউটাউনের ওই বাড়িতে যান।
১৫ তারিখে আনোয়ারুলের ফোন থেকে আরেকটি মেসেজ আসে। সেখানে আনোয়ারুল দিল্লি পৌঁছেছেন জানিয়ে বলা হয়, “আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।”
আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে আসা ওই মেসেজ গোপাল বিশ্বাস পাঠিয়ে দেন আনারের বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে আবদুর রউফকেও।
মোবাইল ফোনের লোকেশনেও রহস্য
এই সময়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, “নিখোঁজ” হওয়ার পর থেকে প্রায়ই বন্ধ ছিল আনোয়ারুলের মোবাইল ফোন। তিনি ভারতে গিয়ে দুটি ফোন ব্যবহার করছিলেন । দুটিই বন্ধ থাকলেও মাঝে মধ্যে চালু করা হয়।
ভারতীয় পুলিশ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। বিভিন্ন জায়গায় সেই ফোনের লোকেশন পাওয়া যায়। বরাহনগরের বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল নিউমার্কেট এলাকায়।
এরপর ১৭ই মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনো এক জায়গায়। লোকেশন পাওয়া যায় আসাম এবং উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাতেও।
প্রশ্ন উঠেছে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকে পাঠানো মেসেজ এমপি আনোয়ারুল নিজেই লিখেছিলেন কি-না তা নিয়েও।